গাপ্পি: মশা নিধনে বনগাঁ পুরসভা থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছাড়া হচ্ছে গাপ্পি মাছ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
স্কুল শুরুর আগে বনগাঁর পাইকপাড়া এফপি স্কুলের খুদে পড়ুয়ার দল সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা সঙ্গীতের জন্য।
একজন শিক্ষিকা পড়ুয়াদের বলছেন, ‘‘আজ আমরা ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে শপথ নিচ্ছি, আমাদের বিদ্যালয়ের চারপাশে জল জমতে দেব না। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখব। অবশ্যই মশারির মধ্যে ঘুমব। জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেব। জ্বর হলে সরকারি হাসপাতাল থেকে রক্ত পরীক্ষা করাব।’’ পড়ুয়ার দল শিক্ষিকার সঙ্গে গলা মিলিয়ে কথাগুলি বলে চলেছে।
ডেঙ্গি মোকাবিলা করতে বনগাঁ ব্লক প্রশাসনের তরফে ব্লকের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সম্প্রতি এমনই শপথবাক্য পাঠ করানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
কেন এমন পদক্ষেপ করা?
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনের তরফে ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এলাকায় দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে ডেঙ্গি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দেওয়াল লিখন বনগাঁ ব্লকে শুরুও হয়েছে। কিন্তু বনগাঁর বিডিও সঞ্জয়কুমার গুছাইতের মনে হয়েছিল, দেওয়াল লিখন হয় তো গ্রামের সব মানুষ পড়বেন না। বিকল্প হিসাবে তখনই পড়ুয়াদের দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করানোর বিষয়টি মাথায় আসে ব্লক প্রশাসনের। ব্লকের প্রাথমিক স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রধান শিক্ষকেরাও উৎসাহ দেখান। এর পরই স্কুলে স্কুলে শুরু হয় ডেঙ্গি প্রতিরোধের শপথবাক্য পাঠ। এলাকার প্রায় ২০০টি প্রাথমিক স্কুলে এখন নিয়ম করে রোজ ওই কর্মসূচি চলছে।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে পড়ুয়াদের যুক্ত করবার কারণ কী?
সঞ্জয় বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা নিশ্চয়ই বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাচ্ছে। সেই মতো বাড়িতে জমা জলও অভিভাবকেরা পরিষ্কার করছেন।’’
শপথবাক্য পাঠ করে পড়ুয়াদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। পাইকপাড়া এফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ ঘোষ চৌধুরী বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা ক্লাসে আমাদের কাছে ডেঙ্গি নিয়ে নানা প্রশ্ন করছে। ডেঙ্গির মশা কেন দিনের বেলা কামড়ায়, ওই মশা কেন বেশি উঁচুতে উড়তে পারে না। মশার লার্ভা কী ভাবে চেনা যায়। ইত্যাদি। পড়ুয়াদের আমরা তা বুঝিয়ে বলছি।’’ তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সাহিদ বিশ্বাস, আমিন মণ্ডলরা জানাল, ‘‘বাড়িতে জল জমতে দিচ্ছি না।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে স্কুল চত্বর যেমন পরিষ্কার থাকবে তেমনই পড়ুয়ারা তাদের বাড়ি ও আশেপাশের এলাকাও পরিষ্কার করতে পারবে। বিডিও বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলেও ওই কর্মসূচি নেওয়া হবে।’’ মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক দিনে হয় তো সুফল মিলবে না, তবে ধীরে ধীরে কার্যকারিতা বোঝা যাবে।’’
গত বছর বনগাঁ ব্লকে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল ব্যাপক হারে। অনেকে মারা গিয়েছিলেন। এ বার তাই আগে থেকেই মশা মারতে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy