Advertisement
E-Paper

Coronavirus in West Bengal: কাজ খুঁজে নিচ্ছে বহু পড়ুয়া

শিক্ষক-শিক্ষিকারা লক্ষ্য করছিলেন, অনলাইন ক্লাসে কিছু ছেলেমেয়ে নিয়মিত অনুপস্থিত। কেউ কেউ মিড ডে মিলের খাদ্যসামগ্রীও নিতে আসছে না।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:২২
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সঞ্জীব দাস (নাম পরিবর্তিত) গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি স্কুলে পড়ে। বাবা বেসরকারি সংস্থার কাজ করতেন। করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়েন। দিন কয়েক আগে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু নিয়মিত কাজ নেই। পড়াশোনায় উৎসাহী হলেও এই পরিস্থিতিতে সঞ্জীব ঠিক ভাবে পড়াশোনা চালাতে পারছে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এবং পারিবারিক অনটনের কারণে অনেক ছাত্রছাত্রী মানসিক অবসাদে ভুগছে। স্কুলে যেতে না পেরে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’’

সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ফিরোজ খান (নাম পরিবর্তিত)। করোনা পরিস্থিতিতে তার বাবা কর্মহীন হয়ে পড়েন। বর্তমানে ভ্যান চালাচ্ছেন। মা কলকাতায় আয়ার কাজ করতেন। এখন সেটাও অনিয়মিত। ফিরোজের বাবা-মা জানালেন, স্কুল না থাকায় ছেলে সঙ্গদোষে বিভিন্ন নেশার কবলে পড়ে গিয়েছে। পারিবারিক অনটনের কারণে ছেলেকে বাড়ির পাশেই বাইক সারানোর গ্যারাজে কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে বকচরার বাসিন্দা দীপ বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত)। তার বাবা ভ্যানচালক, মা মানসিক ভারসাম্যহীন। লকডাউন পরিস্থিতিতে বাবার রোজগার কমেছে। বিকল্প কাজ নেই। দীপ বর্তমানে একটি বিস্কুট কারখানায় কাজ নিয়েছে। মানসিক ভাবে চাপে আছে ছেলেটি, জানায় পরিবার। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী হলেও বাস্তব পরিস্থিতি সেই সুযোগ দিচ্ছে না।

সম্প্রতি বাণী বিদ্যাবীথি স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের প্রায় ১৫০০ ছাত্রছাত্রীর বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সমীক্ষার কাজ করছেন স্কুলের ৪৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ওই সমীক্ষায় শেষে উঠে এসেছে এমনই নানা তথ্য। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চলছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকারা লক্ষ্য করছিলেন, অনলাইন ক্লাসে কিছু ছেলেমেয়ে নিয়মিত অনুপস্থিত। কেউ কেউ মিড ডে মিলের খাদ্যসামগ্রীও নিতে আসছে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন।

স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৫০০ পরিবারে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে ৬৮.২৭% অভিভাবকদের রুজিরোজগার ও পেশায় প্রভাব পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪.৬৩ শতাংশ। ৪৩.৫ শতাংশ পড়ুয়ার মানসিক স্বাস্থ্য সন্তোষজনক। সন্তোষজনক নয় ৫৩.৫ শতাংশ পড়ুয়ার। মানসিক স্বাস্থ্যের হাল খারাপ ২.৯ শতাংশ পড়ুয়ার। স্কুলের অনলাইন ক্লাস করছে ৭৬ শতাংশ পড়ুয়া। বাকিরা করছে না। যারা ক্লাস করছে না, তাদের মধ্যে ৬১.২৫ শতাংশ পড়ুয়ার স্মার্টফোন নেই। ২.১০ শতাংশ পড়ুয়া গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার কারণে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছে না বলেও জানা গিয়েছে। স্কুলের অ্যাকটিভিটি টাস্ক সংগ্রহ করে ৯৩.৭৩ শতাংশ পড়ুয়া। কিন্তু জমা দেয় ৮৯.১২ শতাংশ। যারা জমা দেয় না, সেই পড়ুয়াদের অনেকে পারিবারিক অনটনের কারণে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে সমীক্ষায়। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিভাবকদের ৩৭ শতাংশ ব্যবসা এবং ২৫ শতাংশ দিনমজুরি করেন। করোনায় সে সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য পড়ুয়াদের পড়াশোনায় আগ্রহ ফেরাতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে। ফলও মিলছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘যাদের স্মার্ট ফোন নেই, আমরা তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেছি। ফোন না থাকা পড়ুয়ার বাড়ির কাছাকাছি যে পড়ুয়ার স্মার্টফোন আছে, তাকে খুঁজে বের করা হয়েছে। ওই পড়ুয়ার বাবা-মায়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে, অনলাইন ক্লাসের সময়ে তাদের সন্তান যেন ফোন না থাকা পড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাস করে। সকলেই রাজি হয়েছেন। এখন এক সঙ্গে অনেকে মিলে অনলাইন ক্লাস করছে।’’

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা টাকা দিয়ে রেশন সামগ্রী ও খাতা, বই, পোশাক কিনে দিচ্ছেন। যে সমস্ত পড়ুয়ারা কাজে যুক্ত হয়েছে, তাদের অভিভাবকদের বলা হয়েছে, পড়াশোনার সমস্ত খরচ স্কুল দেবে। শুধু তাই নয়, অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে কাউন্সেলিংও করানো হচ্ছে। এর ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।

Education Students Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy