Advertisement
E-Paper

ফ্যান ঝুললেও ঘোরে না অনেকগুলি, কাহিল রোগী

সকাল ১১টা। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে শিশু কোলে গলগল করে ঘামছিলেন এক মহিলা। লম্বা লাইনে দাঁড়ানো মায়ের কোলে সমানে কেঁদে চলেছিল শিশুটি। অনেক চেষ্টা করেও বাচ্চার কান্না থামাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে পড়লেন মহিলা। মেজাজ হারালেন। আর কাউকে কাছে না পেয়ে বাচ্চাকেই ধমকে বলে উঠলেন, ‘‘একে গরমে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো যাচ্ছে না, তার উপরে এই জ্বালাতন।’’

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:২৫
ভরসা হাতপাখা, আর খোলা জানলাটুকুই। নিজস্ব চিত্র।

ভরসা হাতপাখা, আর খোলা জানলাটুকুই। নিজস্ব চিত্র।

সকাল ১১টা। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে শিশু কোলে গলগল করে ঘামছিলেন এক মহিলা। লম্বা লাইনে দাঁড়ানো মায়ের কোলে সমানে কেঁদে চলেছিল শিশুটি। অনেক চেষ্টা করেও বাচ্চার কান্না থামাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে পড়লেন মহিলা। মেজাজ হারালেন। আর কাউকে কাছে না পেয়ে বাচ্চাকেই ধমকে বলে উঠলেন, ‘‘একে গরমে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো যাচ্ছে না, তার উপরে এই জ্বালাতন।’’ স্বগতোক্তি করে চলেন মহিলা, ‘‘একটা ফ্যান যদি বসাত এখানে, তা হলে তো এত কষ্ট হতো না মানুষগুলোর!’’
দেখা গেল, ৩ নম্বর বহির্বিভাগের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের মাথার উপরে কোনও ফ্যান নেই। শুধু তা-ই নয়, ৩ নম্বর ঘরে বসা চিকিৎসকের মাথার উপরে যে ফ্যানটা ঘুরছে, তার গতি এতই কম, হাওয়া আর হচ্ছে কই! রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে হয়রান দেখাচ্ছিল চিকিৎসককেও।

হাসপাতালের নানা জায়গা ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু ফ্যান ঠিকমতো ঘুরছে না। বেশ কিছু আলো-পাখা খারাপ হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় রোগীর মাথার উপরেও ফ্যান চলছে না।

গোটা দেশে ইতিমধ্যেই গরমে এ বার মারা পড়েছেন সাড়ে সাতশোরও বেশি মানুষ। গরমের চোটে কাহিল গোটা দেশ। কিন্তু নানা কারণে অসুস্থ হয়ে যাঁরা হাসপাতালে এসেছেন, তাঁদের গরম থেকে রেহাই দেওয়ার মতো পরিকাঠামোও নেই ক্যানিং হাসপাতালে। তীব্র গরমে নাজেহাল রোগীরা। গত সাত দিনের মধ্যে অন্তত জনা ছ’য়েক সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েই ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে।

কোথাও কোথাও দেখা গেল, ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর মাথার কাছে বসে হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করছেন বাড়ির লোক। কিন্তু তাতে আর কতটুকু আরাম মেলে। তার উপরে লোডশেডিংয়ের দাপট তো আছেই। সব মিলিয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজনের মধ্যে। চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতাল কর্মীদেরও অবস্থা কাহিল। লোডশেডিং হলে জেনারেটর চালানোর কথা। অভিযোগ, ক্যানিং হাসপাতালে জেনারেটর থাকা সত্ত্বেও সব সময়ে প্রয়োজনে তা চালানো হয় না। কেবলমাত্র অস্ত্রোপচার বা সিটি স্ক্যান বা সিজার করার সময়ে প্রয়োজন পড়লে জেনারেটর চালানো হয়। অনেক সময়ে জেনারেটররেও ভোল্টেজ এত কম থাকে যে পাখা ঘুরলেও তাতে হাওয়া হয় না। আলো জ্বলে টিমটিম করে।

বৃহস্পতিবারই বারুইপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলায় লো-ভোল্টেজ সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবস্থার উন্নতির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরকে। কিন্তু সেই নির্দেশ কবে কার্যকর হবে, তা জানেন না কেউ।

দিন কয়েক আগে বাসন্তীর আমঝাড়ার তালদা এলাকা থেকে জন্ডিস আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পুলিন সর্দার। বললেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমে মাথার উপরে কোনও ফ্যান নেই। যে টিউবলাইট দেওয়ালে ঝুলে আছে, তা জ্বলে না। রাতের দিকে অন্ধকারের মধ্যে বসেই ভাত খেতে হয়।’’ তাঁর আরও অনুযোগ, হাসপাতালে পানীয় জলেরও খুব সমস্যা। যে জল আছে, তা খাওয়ার অযোগ্য। বাইরে থেকে জল এনে খেতে হয়।

তালদি থেকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে শিশুবালা সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘দিনে রাতে বহু বার লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু সে সময়ে ঠিক মতো জেনারেটর চলে না। বেডের উপরে ফ্যান আছে ঠিকই, কিন্তু তা ঠিক মতো ঘোরে না। অসুস্থ শরীরে গরমে আরও কষ্ঠ হচ্ছে।’’ রোগীদের এই সমস্যা নিয়ে হাসাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন কোনও হেলদোল নেই বলেও অভিযোগ।

হাসপাতালের চিকিৎসক সমর রায় জানালেন, গরমের জন্য শিশু, বৃদ্ধ-সহ নানা বয়সের রোগীরা পেটে ব্যথা, বমি, ত্বকে এলার্জি-সহ নানা উপসর্গ নিয়ে আসছেন। এই গরমে সকলকে অতিরিক্ত জল বা অন্য পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোদে যতটা সম্ভব কম বেরোলেই ভাল। যদি একান্ত বেরোতেই হয়, ছাতা, টুপি, সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। সম্ভব হলে ফল খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই অসুস্থ, হাসপাতালে এসেছেন, তাঁদের সুবিধার জন্য কী ভাবছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? মহকুমাশাসক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা আছে। জলের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ করা হয়েছে। আলো বা পাখার সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সরকার জানান, সমস্যাগুলি মেটানোর চেষ্টা করা হবে।

canning hospital poor fan canning hospital fans
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy