Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ফিডার রোড সারানোর খরচ দেবে কে, চলছে চাপানউতোর

রাস্তা তুমি কার? গারুলিয়া পুরসভার দায়িত্বের চৌহুদ্দিতে ফিডার রোডের নাকি চিহ্নই নেই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদেরও সরল জিজ্ঞাসা, কাজের দায়িত্ব আমাদের বুঝি? ফলে রাস্তার অসুখ-বিসুখ হলে কে দায়িত্ব নেবে, সেটা নিয়েই চাপানউতোর। ফল যা হওয়ার তা-ই। প্রতি বর্ষায় খানাখন্দেরা আরও হৃষ্টপুষ্ট হয়। বাসিন্দাদের হাত-পা ভাঙে।

খন্দপথেই চলছে যাতায়াত। ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

খন্দপথেই চলছে যাতায়াত। ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪০
Share: Save:

রাস্তা তুমি কার?

গারুলিয়া পুরসভার দায়িত্বের চৌহুদ্দিতে ফিডার রোডের নাকি চিহ্নই নেই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদেরও সরল জিজ্ঞাসা, কাজের দায়িত্ব আমাদের বুঝি? ফলে রাস্তার অসুখ-বিসুখ হলে কে দায়িত্ব নেবে, সেটা নিয়েই চাপানউতোর। ফল যা হওয়ার তা-ই। প্রতি বর্ষায় খানাখন্দেরা আরও হৃষ্টপুষ্ট হয়। বাসিন্দাদের হাত-পা ভাঙে। অটোর ইঞ্জিন বসে যায়। রিকশার চাকা খুলে প়ড়ে।

কিন্তু রাস্তার চিকিৎসা হয় না।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ও ঘোষপাড়া রোডের মধ্যে সংযোগকারী ফিডার রোডের দৈর্ঘ্য মেরেকেটে তিন কিলোমিটার। কিন্তু সেটাই এখন প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে রাস্তা নিয়ে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। কিন্তু রাস্তা সারাবে কে, ফান্ড আসবে কোথা থেকে, সেটাই ঠিক হয়ে ওঠে না। ফলে ক্রমশ হতশ্রী হয় রাস্তা। আর কপাল চাপড়ান এলাকাবাসী।

প্রশাসনিক বৈঠক করেও রাস্তা সারানো নিয়ে কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছনো যায় না। রাস্তাটি শ্যামনগর বাসুদেবপুর মোড় থেকে শ্যামনগর স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছে। খাতায়-কলমে এর মধ্যে বাসুদেবপুর মোড় থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা জেলা পরিষদের আওতায়। শ্যামনগর স্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা গারুলিয়া পুরসভার অন্তর্ভুক্ত।

যদিও দুই কর্তৃপক্ষেরই দাবি, ওই রাস্তার দেখভাল করা নাকি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কাজেই সামান্য কিছু দান-খয়রাত হয় তো হয় কখনও সখনও। কিন্তু পাকাপাকি রাস্তা সারাবে কে, সে প্রশ্নটা বর্ষার জমা জলে হাবুডুবু খায়।

অথচ, এই রাস্তা সারানো নিয়েই প্রতিশ্রুতির অন্ত নেই। পুরসভা, পঞ্চায়েত, বিধানসভা এমনকী, লোকসভা ভোটেও প্রার্থীদের মুখে ফিডার রোড সংস্কারের কথা উঠে আসে। ভোট মিটলে অবস্থা যে কে সেই এক খাবলা রাবিশও পড়ে না, পিচ তো দূরের কথা! ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, রাস্তা সারানোর ‘মুলো’ সামনে ঝুলিয়ে যে যার মতো ভোট করে বেরিয়ে যায়।

নোয়াপাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক মধুসূদন ঘোষ বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর অবস্থা রাস্তার। বাসিন্দারা ধৈর্য ধরে আছেন। কী আর করবেন, তাঁরা নিরুপায়ও বটে। ভাঙা রাস্তা দিয়ে অতি কষ্টে চলাচল করতে হয় তাঁদের।’’ সম্প্রতি সিপিএম এবং কংগ্রেস মিছিল করে রাস্তা সারানোর দাবি তুলেছে। এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মিছিল, স্মারকলিপি অবশ্য এর আগে কম হয়নি।

কিন্তু ২০০১ সালের দায়সারা ভাবে কিছুটা কাজ হয়েছিল রাস্তার। তারপরে আর কোনও সংস্কারই হয়নি বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন।

সে সময়ে টাকা এসেছিল কোথা থেকে?

প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলা পরিষদের একটি ফান্ড থেকে টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক। তারপর থেকে সকলেই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।

সংযোগকারী রাস্তা হওয়ায় বিভিন্ন কারখানা থেকে মালবাহী ট্রাক বেরোয়। অটো, ভ্যানও এই পথে চলাচল করে। স্কুল ও পঞ্চায়েত অফিস আছে এই রাস্তার ধারে। ভোটের সময়ে বড় জনসভা হলেও এই রাস্তার ধারে অন্নপূর্ণা কটন মিলের মাঠে হয়। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নেমেছিল। এই পথ দিয়ে যেতেও হয়েছিল তাঁকে।

রাস্তাটি সারানো খরচ সাপেক্ষ, জানাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কারণ, যে পরিমাণ ভারী গাড়়ি চলাচল করে এই রাস্তায়, তাতে সাধারণ অ্যাসফল্টের রাস্তা তৈরির থেকে এ ধরনের রাস্তার খরচ অনেক বেশি হয়। পাথর বসিয়ে রাস্তা করার কথা।

গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের এত সামর্থ্য কোথায় যে ওই রাস্তা সারাব?’’

আর কী বলছে জেলা পরিষদ?

পূর্ত ও সড়ক কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠিয়েছিলাম। তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছেন। তা দেখে কী ভাবে দ্রুত কাজ শুরু করা যায়, দেখব।’’

কিন্তু এত দিন কেন সারানো হল না, সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।

সম্প্রতি জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা-সহ রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী। বিষয়টি জেলাশাসকের নজরেও আনা হয়েছে। পীযূষবাবু বলেন, ‘‘রাস্তাটি নিয়ে খুবই জটিলতা হচ্ছে। মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছেন। আমি নিজেও একাধিকবার রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। কিন্তু ফান্ড দেবে কে, তা নিয়েই জটিলতা। কোনও ব্যবস্থা না হলে পূর্ত দফতরকেই এই রাস্তাটির দায়িত্ব নিতে হবে।’’ এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এমন আলোচনার কথাও কম শোনেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। একজন তো কটাক্ষ করে বলেই ফেললেন, ‘‘ওঁরা একটা বৈঠক করে এটাই ঠিক করেন, পরের বৈঠকটা আবার কবে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Insufficient Fund Feeder Road repairing work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE