Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Dengue

ছুটি পেয়েও ফের জ্বরে ভুগে মৃত্যু

নুপুরদেবীর আরও দাবি, বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করালে তাতে এনএস-১ পজিটিভ ছিল। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় পুরসভার পক্ষ থেকে ব্লিচিং ও মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছে।

অপেক্ষা: দেগঙ্গার হাসপাতালে সামনে লাইন বিকেল গড়িয়েও। ছবি তুলেছেন সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অপেক্ষা: দেগঙ্গার হাসপাতালে সামনে লাইন বিকেল গড়িয়েও। ছবি তুলেছেন সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

জ্বরে ভুগে একের পর এক মৃত্যু ঘটেই চলেছে দেগঙ্গায়। জেলার অন্য প্রান্তেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৬ জন। দেগঙ্গা ও গাইঘাটার বিএমওএইচ জ্বরে পড়েছেন।

বনগাঁর শক্তিগড়ের পুষ্প হাজরাকে (১৭) বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে আনা হয় জ্বর গায়ে। বুধবার সেখানেই মারা যায় মেয়েটি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। এই প্রথম বনগাঁ পুর এলাকার কারও মৃত্যু হল জ্বরে ভুগে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, দিন কয়েক বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ছিল সে। পরে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। ফের জ্বর আসে। আবারও ভর্তি করা হয় ওই হাসপাতালে। কিন্তু আর বাঁচানো যায়নি। তার মা নুপুরদেবী স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁর আফসোস, ‘‘চিকিৎসার গাফিলতিতেই মেয়েকে হারালাম। হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি ছুটি না দিলে হয় তো এমনটা হত না।’’ নুপুরদেবীর আরও দাবি, বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করালে তাতে এনএস-১ পজিটিভ ছিল। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় পুরসভার পক্ষ থেকে ব্লিচিং ও মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছে।

দেগঙ্গার সাতহাতিয়ার রশিদা বিবি (৩৪) ভর্তি ছিলেন বারাসত জেলা হাসপাতালে। বুধবার রাতে সেখানেই মারা যান। জ্বরে ভুগছিলেন বলে জানালেন বাড়ির লোকজন।

ছামেনা বিবি (৩৮) চকধুলাট গ্রামে থাকতেন। জ্বরে আক্রান্ত এই মহিলাকে পাঠানো হয়েছিল আরজিকরে। সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ ছিল আত্নীয়দের। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল নার্সিংহোমে। পথেই মারা যান ওই মহিলা।

কেএম চাঁদপুর গ্রামের আকবর আলি (৭৪) বৃহস্পতিবার বাড়িতেই মারা গিয়েছেন জ্বরে ভুগে।

চৌরাশির উত্তর মাঠকুমড়ার বাসিন্দা মঞ্জুরা বিবির চিকিৎসা চলছিল আরজিকরে। বৃহস্পতিবার সেখানেই মারা গিয়েছেন তিনি।

বুধবার আরজিকরে মারা গিয়েছে হাবরার কুমড়ো এলাকার সাত বছরের বাবন ঘোষ।

দিন কয়েক আগেই মারা গিয়েছেন হাবিবুল্লার মা সেরেনা বিবি। বারাসত হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়। হাবিবুল্লার আক্ষেপ, ‘‘মৃত্যুর কারণটা পর্যন্ত জানতে পারলাম না।’’ বারাসত হাসপাতালে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা হয়েছে হাবিবুল্লারও। এখনও সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। বললেন, ‘‘বাইরের ল্যাব থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলাম। বলছে ডেঙ্গি।’’

চাঁপাতলা ১ পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য তনুজা বিবির শ্বশুর আকবর আলি (৭৪) বৃহস্পতিবার জ্বরে ভুগে বাড়িতে মারা গিয়েছেন। ক’দিন আগে মারা গিয়েছেন তনুজার মামি রাবেয়া বিবি। তিনি ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য। তনুজার ছেলে-মেয়েও ভুগছে জ্বরে। ল্যাবের রিপোর্ট দেখিয়ে তনুজা জানালেন, দু’জনেরই রক্তে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।

কেএম চাঁদপুর গ্রামে বুধবার স্বাস্থ্য শিবির হয়েছে। তবে সাকুল্যে ঘণ্টা দু’য়েক। তারপরেও লাইন ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা ‘আর ওষুধ নেই’ বলে চলে যান— জানালেন স্থানীয় মানুষজন। বৃহস্পতিবার সেই শিবিরও চোখে পড়েনি।

এই পরিস্থিতিতে জ্বরের ঘোরে ধুঁকতে ধুঁকতে আর কত দিন, প্রশ্ন দেগঙ্গার।

পরিস্থিতি যে ক্রমশ ঘোরাল হচ্ছে, তা বুঝতে পারছে স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জ্বরে আক্রান্ত সাতটি ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন বারাসত হাসপাতালে। ১৮টি স্বাস্থ্য শিবির চালুর নির্দেশ দেন। হাবরা হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স পাঠানোর কথা আগেই জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তবে ৮ জন নার্স এখনও পাঠাতে পারেনি তারা। ফলে যে অব্যবহৃত ঘরটি খুলে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করে এসেছিলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য নিজে, সেখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি শুরুই করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE