হাসপাতাল: ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
বেলা গড়িয়ে তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। বাগদা ব্লকের কনিয়াড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের দেখা মিলল না। একমাত্র নার্স রিক্তা হালদার রোগীদের ওষুধ দিচ্ছেন। রোগীর চাপও তেমন ছিল না তখন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে কাঠের বেঞ্চিতে বসেছিলেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধ। এসেছিলেন শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে। এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না আসায় নার্সের থেকেই ওষুধ নিয়ে গেলেন বাধ্য হয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়। তাঁরা জানান, এখানে চিকিৎসকের দেখা মিলবে সপ্তাহে মাত্র দু’দিন। কোনও কোনও সপ্তাহে তিন দিন। মূলত, সোম ও শুক্রবার চিকিৎসক আসেন। ওই দিনগুলোতে ভিড়টা একটু বেশি হয়। অন্য দিন নার্সই ওষুধপত্র দেন।
যদিও ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এখানে সপ্তাহে ছ’দিন চিকিৎসক থাকার কথা। বহির্বিভাগে যতক্ষণ রোগী থাকবে, ততক্ষণ দেখার কথা তাঁর। কিন্তু ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক মঙ্গলবার বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নাইট ডিউটি করেন। ওই দিন বাদে তাঁর বাকি দিনগুলি থাকার কথা। কিন্তু থাকেন আর কোথায়!
এ দিন চিকিৎসক কেন গরহাজির, জানতে চাইলে বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘কেন এ দিন ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ছিলেন না, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার জানিয়েছেন, জেলার বেশ কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও কোনও চিকিৎসক নেই। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জানানো হয়েছে। কনিয়াড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক কেন ছিলেন না, সে নিয়ে খোঁজ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানানো হল, এ দিন প্রায় একশো রোগী বহির্বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন। জ্বরে আক্রান্তও ছিলেন অনেকে। সকলেই নার্সের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে গিয়েছেন। জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই এখানে। অতীতে সর্বক্ষণের চিকিৎসকের দাবিতে গ্রামবাসী বহু আন্দোলন করেছেন। হতাশ হয়ে তাঁরাও এখন চুপচাপ। অতীতে এখানে সর্বক্ষণ রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। বহু দিন হল সে সব লাটে উঠেছে। নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার আবাসন বন-জঙ্গলে ভরা। মশা, সাপের উপদ্রব সেখানে।
বেলা ২টো নাগাদ দেখা গেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা তালা লাগিয়ে বাড়ি ফিরছেন। পর দিন সকাল ১০টার মধ্যে এলাকার কোনও মানুষের চিকিৎসার দরকার পড়লে স্থানীয় হাতুড়ে বা ওষুধের দোকানের উপরে ভরসা করতে হয়। না হলে যেতে হয় প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। অথবা ১৭ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। সে জন্য গাড়ি ভাড়া আছে, ধকল তো আছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy