Advertisement
২০ মে ২০২৪

বনগাঁ শহরেও ফুটল পদ্ম

বৃহস্পতিবার ভোটের ফল বেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ভোট দেওয়ার সময়ে উন্নয়নের কথা মনে রাখেননি।

উৎসব: বনগাঁ শহরে বিজেপির মিছিল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

উৎসব: বনগাঁ শহরে বিজেপির মিছিল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁ শহরের পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে কোনও দ্বিমত নেই। পুরবাসী এক কথায় তা স্বীকারও করেন। এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে সে কথাই বেশি করে তুলে ধরা হয়েছিল ঘাসফুল শিবিরের প্রচারে। তৃণমূল নেতাদের বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘যদি আপনাদের (শহরবাসী) মনে হয়, শহরের উন্নয়ন হয়েছিল, তা হলে নিশ্চয়ই আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।’’

কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোটের ফল বেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ভোট দেওয়ার সময়ে উন্নয়নের কথা মনে রাখেননি। বনগাঁ পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ২১টি থেকেই লিড পেয়েছেন। একমাত্র ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর লিড পেয়েছেন। ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ডই তৃণমূলের দখলে। একটি করে ওয়ার্ড কংগ্রেস ও সিপিএমের।

ঐতিহ্যগত ভাবে বনগাঁ শহর বরাবরই ডানপন্থীদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক অতীতে কোনও ভোটেই এখানে শাসক দলের এমন ভরাডুবি হয়নি।

গত কয়েক বছরে বনগাঁ শহরের পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক অডিটোরিয়াম, শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি, পুরবাসীকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে উন্নতমানের ‘স্বাস্থ্যদীপ’ তৈরি হয়েছে। সেখানে কম টাকায় সিটি স্ক্যান-সহ নানা চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের বেশ কিছু রাস্তা চওড়া করা হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের জন্য ত্রিকোণ পার্ক এলাকা সাজানো হয়েছে। ঝাঁ চকচকে পুরভবন তৈরি হয়েছে। বাজারগুলির পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের জন্য মার্কেট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এমন আরও বহু কাজ হয়েছে, যা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে।

তারপরেও কেন এমন ভরাডুবি?

তৃণমূল নেতৃত্ব দৃশ্যতই হতাশ। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘শহরে বামেদের ভোটের বেশিরভাগই বিজেপি পেয়েছে। আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখেছি, গত বিধানসভা ভোটে পুরসভা এলাকায় বামেরা ২৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এ বার লোকসভায় বামেরা পেয়েছেন মাত্র হাজার চারেক ভোট। গোটাটাই বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে।’’

বামেরা নিজেদের ভোট ধরে রাখতে না পারার ফলেই কি তৃণমূলের এমন ভরাডুবি? স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, নিজে মতুয়া হয়েও প্রার্থী মমতা ঠাকুর মতুয়াদের ভোট ধরে রাখতে পারেননি।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘বনগাঁ শহরে মানুষ একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। মানুষের এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এ সবের বিরুদ্ধেই শহরের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়ে ভোট দিয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে।’’ তা হলে প্রশ্ন, তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে বামেদের ভোটটুকু বামেরাও তো পেতে পারতেন। সেটা হল না কেন? সিপিএম নেতৃত্বের মতে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকলে তাঁরা ভরসা পাবেন বলে মনে করেছেন মানুষ। সে জন্যই তৃণমূল বিরোধিতার ভোট গিয়েছে বিজেপি শিবিরে। বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার মাথায় যিনি বসে রয়েছেন, তাঁর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ জানিয়ে ভোট দিয়েছেন আমাদের।’’

বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘এই হার থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁদের সম্মান দিতে হবে। ঔদ্ধত্যের কোনও জায়গা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE