Advertisement
০১ মে ২০২৪

প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ায় বাড়ছে মশাও 

ডেঙ্গির প্রকোপে গত কয়েক বছর ধরে কাহিল উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। অনেকের মৃত্যু হয়েছে গত কয়েক বছরে।

অসচেতন: বাজারে এখনও ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ

অসচেতন: বাজারে এখনও ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এলাকার অনেকে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। ইতিমধ্যেই কয়েক জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। রোজই নতুন করে মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই মাসে হাসপাতালে অ্যালাইজা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কয়েকশো মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় পঞ্চাশ জন ডেঙ্গি-আক্রান্ত মানুষ ভর্তি ছিলেন।

ডেঙ্গির প্রকোপে গত কয়েক বছর ধরে কাহিল উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। অনেকের মৃত্যু হয়েছে গত কয়েক বছরে। একটা সময়ে ডেঙ্গি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা দলগুলি। অনেকের মৃত্যু ডেঙ্গিতে হলেও তাঁদের মৃত্যুর শংসাপত্রে শক সিনড্রোম, হৃদরোগের মতো কারণ লেখা হয়েছে হাসপাতাল থেকে। তবে গত বছর থেকে মশার দাপট রুখতে নড়ে বসেছিল প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও রোখা যাচ্ছে না ডেঙ্গি-মশার দাপট। জল জমতে না দেওয়া, এলাকা সাফ-সুতরো রাখা যে ডেঙ্গি প্রতিরোধের প্রাথমিক শর্ত, তা নিয়ে প্রচারও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু মানুষ এখনও খুব সচেতন, তা বলা চলে না। আবার কিছু এলাকায় ডেঙ্গি রোধে সরকারি গাফিলতির অভিযোগও ভুরি ভুরি।

প্লাস্টিক, থার্মোকলের ব্যবহার না কমানো গেলে নালা-নর্দমা দিয়ে জল নিকাশি ভাল হবে না, তা জানা কথা। কিন্তু নিয়মিত নিকাশি সাফ সব জায়গায় হচ্ছে না বলে অভিযোগ। প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার নিয়েও হুঁশ ফেরেনি হাবড়াবাসীর।

শহর এলাকায় প্রকাশ্যেই প্লাস্টিকের ক্যারিবাগের ব্যবহার চোখে পড়ে। বাজার, মুদির দোকান, মিষ্টির দোকান— সর্বত্রই চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। পুর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কর্তারা মনে করেন, হাবড়ায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ানোর পিছনে এটা একটা বড় কারণ।

হাবড়া শহরে ঘুরে দেখা গেল, বড় বাজার, চাল বাজার, তেঁতুলতলা বাজার, পাটপট্টি, কালীবাড়ি বাজার, বাণীপুর, কইপুকুর-সহ সর্বত্রই ক্যারিব্যাগে কেনাকাটা করছেন মানুষজন। পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী দোকানে ছাউনি দেওয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হলে, এক দোকানি বলেন, ‘‘সকলেই তো আবার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছে। পুরসভা থেকেও তো আর কিছু বলা হয়নি।’’ এক ব্যক্তি ক্যারিব্যাগে মাছ নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে জ্বর ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, তা জানেন কি? প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তির সাফাই, ‘‘বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়েছিলাম। ব্যাগ আনতে ভুলে গিয়েছি।’’

এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু বাড়ির পিছনে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থার্মোকল ফেলে রাখা হয়েছে। তাতে জল জমেছে। ডাবের খোল, টায়ার, উঠোনে থাকা তুলসি মন্দিরেও জল জমেছে। বেশ কিছু বাড়ির টিউবওয়েল চত্বরে গর্ত। সেখানে জমা জলে মশার ডিম ভাসছে। ছাদে রাখা টবে জল জমে রয়েছে। ছাদেও জল জমে। মশার বংশবৃদ্ধির এ সবই অনুকূল জায়গা।

পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জলের খোঁজ নিতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন থেকে কেউ বাড়িতে ঢুকতে দিলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

পুর কর্তৃপক্ষ গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে শহরে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তার আগে মাস দু’য়েক ধরে মানুষকে প্লাস্টিকের দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে পুরসভার তরফে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়। শহরের ৭৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, পুলিশ সকলে নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেন। নাগরিক কনভেনশন হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও প্রচারের কাজে লাগানো হয়েছিল।

১ জানুয়ারির পর থেকে বাজার, দোকান, হাটে পুরসভা ও পুলিশ নিয়মিত ধরপাকড় চালাতে থাকে। প্রচুর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও পলিথিন বাজেয়াপ্ত হয়। এ সবের জেরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু গত বছর অক্টোবর মাসে নির্বাচিত পুরসভা মেয়াদ শেষ হয়। প্রশাসক বসে পুরসভায়। তারপর থেকে নানা কাজে পুরসভার গাফিলতি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষ জনের। প্লাস্টিক নিয়ে নজরদারিও কমেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, পলিথিন ও থার্মোকলের ব্যবহার আমরা প্রায় ৯৫ শতাংশ বন্ধ করতে পেরেছিলাম।’’ এখন যে প্লাস্টিকের ব্যবহার ফের বেড়ে গিয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন তিনিও। সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘জ্বর-ডেঙ্গি রুখতে পুরবাসীকে প্লাস্টিক থার্মোকল নিয়ে সচেতন হতেই হবে।’’

হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জোর করে প্লাস্টিক-থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। মানুষকে সচেতন করতে তাঁদেরকে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। নিশ্চয়ই মানুষ তা বুঝতে পারবেন।’’

পুরসভার প্রশাসক তথা বারাসতের মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্লাস্টিক-থার্মোকলের বিক্রি বন্ধ করতে শুক্রবার এলাকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করব। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Habra Plastic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE