Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Jyotipriya Mallick Arrest

বালুকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরাতেই অন্য সুর হাবড়া তৃণমূলের

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জ্যোতিপ্রিয়ের থেকে দূরত্ব বাড়ানো শুরু করেছিলেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৯
Share: Save:

মাস তিনেক আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু তারপরেও এতদিন তাঁর পাশে থাকারই বার্তা দিয়ে আসছিলেন হাবড়ার তৃণমূল নেতারা। হাবড়াই ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের নির্বাচনী কেন্দ্র। কিন্তু তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো মাত্র ‘দূরত্ব’ বাড়ানো শুরু করলেন ওই নেতারাও। হাবড়ার বিভিন্ন দলীয় ব্যানার, ফেস্টুনে আর জ্যোতিপ্রিয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে না। তাঁর হয়ে ক’দিন আগে পর্যন্ত যাঁরা সওয়াল করেছেন, তাঁরাও সাবধানী!

হাবড়ার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “দলের বার্তা আমাদের কাছে স্পষ্ট। বালুদা সম্ভবত অতীত।” হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা, প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসদের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী যা ভাল মনে করেছেন, করেছেন। এ নিয়ে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই।”

গত বছর ২৭ অক্টোবর রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা তৎকালীন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়। বন দফতরের পাশাপাশি শিল্পোদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন দফতরেরও মন্ত্রী ছিলেন তিনি। দুই দফতরের মন্ত্রিত্ব থেকেই গত শুক্রবার ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হয় তাঁকে।

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জ্যোতিপ্রিয়ের থেকে দূরত্ব বাড়ানো শুরু করেছিলেন। জেলার অন্যত্র দলীয় কোনও কর্মসূচিতে তাঁর ছবি থাকছিল না। নেতানেত্রীরা ভাষণেও কার্যত তাঁর নাম মুখে আনছিলেন না। ব্যতিক্রম ছিল হাবড়া। সেখানকার নেতারা নানা ভাবে ‘বালুদা’র (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাক নাম) পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আসছিলেন। হাবড়া পুরসভার পক্ষ থেকে ঘটা করে বালুর জন্মদিন পালন করা হয়। হাবড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন, বাণীপুর লোক উৎসব, পুরসভা পরিচালিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বালুকে প্রধান উপদেষ্টা বা মুখ্য পৃষ্ঠপোষক করা হয়েছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে যে ফ্লেক্স লাগানো হয়েছিল, তাতেও বালুর ছবি ছিল। পরে তা সরিয়ে দেওয়া হয়।

যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে হাবড়া শহরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে যে ব্যানার-ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে, তাতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছবি থাকলেও বালুর ছবি নেই। এ নিয়ে অবশ্য হাবড়া শহর যুব তৃণমূল সভাপতি রিঙ্কু দে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

হাবড়া তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আগামী দিনে বালুকে হয়তো আর প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হবে না। এক নেতার কথায়, ‘‘ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই মতো কাজ করব।” তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান নির্মল ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে লোকসভা ভোটে রাজ্যে তৃণমূলের ভালই হবে।”

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব হয় তো বুঝতে পেরেছেন, লোকসভা ভোটের আগে জ্যোতিপ্রিয়ের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তা ছাড়া, মন্ত্রী ছাড়া দফতরের কাজকর্ম ঠিক মতো পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছিল। সে কারণেই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সন্দেশখালির ঘটনার পরে দলের অনেকেই মনে করছেন, শেখ শাহাজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বাড়বাড়ন্তের কারণ ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের প্রশ্রয়।

বালুকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর দাবিতে সিপিএম পথে নেমেছিল। সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন, বালুকে দিয়ে আরও কোনও কাজ হবে না। তাই তাঁকে এখন ছেঁটে ফেলা হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE