Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জন্মদিনেও অবহেলিত নীলদর্পণের স্রষ্টার ভিটে

ধ্বংসস্তূপের মতো চেহারা নিয়েছে বাড়িটা। ইটের পাঁজর বেরিয়ে রয়েছে। দেওয়াল বেয়ে বট-অশ্বত্থের সারি। দরজা জানলা তো কবেই উধাও। মাথার উপরে ছাদটুকুও নেই। সব মিলিয়ে সাপখোপের নিরাপদ আড্ডার জায়গা। অথচ, ইতিহাসের নানা সাক্ষী বহন করছে এই বাড়িই। যা রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগই নেই সরকারি তরফে। বনগাঁ মহকুমার গোপালনগর চৌবেড়িয়া গ্রামের ওই বাড়িরই একটি ঘরে জন্ম হয় ‘নীলদর্পণ’ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্রের।

দীনবন্ধু মিত্র।—ফাইল চিত্র।

দীনবন্ধু মিত্র।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

ধ্বংসস্তূপের মতো চেহারা নিয়েছে বাড়িটা। ইটের পাঁজর বেরিয়ে রয়েছে। দেওয়াল বেয়ে বট-অশ্বত্থের সারি। দরজা জানলা তো কবেই উধাও। মাথার উপরে ছাদটুকুও নেই। সব মিলিয়ে সাপখোপের নিরাপদ আড্ডার জায়গা। অথচ, ইতিহাসের নানা সাক্ষী বহন করছে এই বাড়িই। যা রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগই নেই সরকারি তরফে। বনগাঁ মহকুমার গোপালনগর চৌবেড়িয়া গ্রামের ওই বাড়িরই একটি ঘরে জন্ম হয় ‘নীলদর্পণ’ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্রের। ওই বাড়িতে বসেই লেখা হয়েছিল নীলদর্পণ নাটকের কিছুটা অংশ। নাট্যকারের ছেলেবেলাও কেটেছে বাড়িটিতে। দীনবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের পাঠশালায়। যদিও বাল্যশিক্ষা শেষ করে তিনি বাবা কালাচাঁদ মিত্রের সঙ্গে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু নানা সময়ে ফিরেও এসেছিলেন দেশের ভিটেয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কবি ঈশ্বর গুপ্ত, সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষের পা পড়েছিল এখানে।

শুক্রবার ছিল নাট্যকারের জন্মদিন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১৮২৯ সালের ১০ এপ্রিল দীনবন্ধু এখানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্মসাল নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল গোপালনগর-নিমতলা সড়কের পাশে বাড়িটি। পরিবারের সদস্যেরা বাড়ির সামনে নাট্যকারের আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়েছেন। আর দীনবন্ধুর নামাঙ্কিত স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তীর্থজিৎ মুখোপাধ্যায় পড়ুয়াদের নিয়ে এসে মূর্তিতে মালা দিয়ে গিয়েছেন। দুপুরে বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় ওই বাড়িতে গিয়ে নাট্যকারের আবক্ষ মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ঘুরে দেখেন ভগ্নপ্রায় বাড়িটি।

এই হাল হয়েছে বাড়ির। —নিজস্ব চিত্র।

বারো বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্প থেকে নাট্যকারের একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়। এখানে পরিবারের সদস্যদের কাছে রয়েছে নাট্যকারের একটি বাধাঁনো ছবি। এ ছাড়া কেউ এলে নাট্যকার সম্পর্কে আর কিছুই এখানে দেখার নেই। এলাকায় ফি বছর অবশ্য নাট্যকারের নামে একটি মেলার আয়োজন করা হয়, শুধু এটুকুই। ডান-বাম কোনও রাজ্য সরকারই দীনবন্ধু মিত্রের স্মৃতি রক্ষায় তেমন পদক্ষেপ করেনি বলে ক্ষোভ রয়েছে এলাকার মানুষের। বিভিন্ন সময়ে সরকারের বহু মন্ত্রী-সাংসদ ওই বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

মিত্র পরিবারের বংশধর সোমেন মিত্র ও সঞ্জিৎ মিত্ররা জানালেন, তাঁরা চান রাজ্য সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে পুরনো আদলে সংস্কার করে এখানে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করুক। বাম ও তৃণমূল সরকারের কাছে ওই বিষয়ে দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও সরকার এগিয়ে আসেনি। দীনবন্ধু ডাকবিভাগের উচ্চপদে কাজ করতেন। সে জন্য তাঁর নামে ডাকটিকিট চালু হোক, এমন দাবিও আছে পরিবারের। সারা বছর এখানে দূর দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ দীনবন্ধু ভিটে দেখতে আসেন। কিন্তু তাঁরা ওই ভগ্নপ্রায় বাড়ি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। এলাকাটি বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বিধায়ক তৃণমূলের সুরজিৎ বিশ্বাস। তিনিও বাড়িটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বললেন, ‘‘বাড়িটি সংস্কারের জন্য ও চারিদিকে পাঁচিল দেওয়াল জন্য তিনি তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে। কিন্তু জমি নিয়ে মিত্র পরিবারের মধ্যে শরিকি বিবাদের জেরে কাজ করা যায়নি।’’ বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকার যাতে উদ্যোগী হয়, সে জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছেন বলেও জানিয়েছেন। আশার কথা শুনিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘দীনবন্ধু মিত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার কাছে লিখিত আবেদন জানানো হলে বিষয়টি নিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। বাংলার মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান জানানে আমাদের সরকারের পদক্ষেপ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE