Advertisement
E-Paper

মাটির দাম বাড়ায় বিপাকে প্রতিমা শিল্পী

সাম্প্রতিক অতি বৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি জমির। এখনও বহু খেত জলের তলায়। এতে এখন সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বনগাঁর প্রতিমা শিল্পীরা। কারণ এখানকার বেশিরভাগ শিল্পীই খেতের মাটিতে প্রতিমা গড়েন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৭
পরিশ্রমে খামতি নেই। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পরিশ্রমে খামতি নেই। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সাম্প্রতিক অতি বৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি জমির। এখনও বহু খেত জলের তলায়। এতে এখন সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বনগাঁর প্রতিমা শিল্পীরা। কারণ এখানকার বেশিরভাগ শিল্পীই খেতের মাটিতে প্রতিমা গড়েন।

এ বার বৃষ্টির ফলে মাটি সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। যা মিলছে, তার দামও বেশি। বেড়ে গিয়েছে বাঁশের দামও। দীর্ঘদিন ধরেই বনগাঁর গোবরাপুর বাজার এলাকায় প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী ভগীরথ সর্দার। তিনি এ বার বারোটি মূর্তি তৈরি করছেন। মহকুমার পাশাপাশি তাঁর প্রতিমা বিরাটিতেও যাচ্ছে। ভগীরথবাবু বলেন, ‘‘আগের বার আঠারোটি প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। এখানকার মাটি দিয়েই প্রতি বছর প্রতিমা তৈরি করি। এ বার স্থানীয় মাটি সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেশি প্রতিমা তৈরি করতে পারছি না।’’ অন্যান্য বছরগুলিতে স্থানীয় বিল খেত থেকে তিনি এঁটেল মাটি, বেলে মাটি নিয়ে আসেন। জলের জন্য এ বার একটি বাঁশবাগানে গর্ত খুঁড়ে মাটি এনেছেন। কিন্তু ওই মাটি ব্যবহার করে তাঁর দু’হাতে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।

খেত থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তার মধ্যেই মাটি তুলতে হচ্ছে। আগে এক-ভ্যান মাটি ৩০ টাকায় পাওয়া যেত। এ বার তা বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেল। স্থানীয় ঘাটবাওর এলাকার প্রতিমা শিল্পী কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘অন্য বছর ৭০০ টাকায় এক ট্রাক মাটি কিনেছি। এ বার তা ১৩০০ টাকায় মিলেছে। আর বেলে মাটি তো টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।’’

বন্যা পরিস্থিতির জন্যই বাঁশের চাহিদা ভীষণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে। বানভাসি হওয়ার পর সাধারণ মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়ে ত্রিপল লাগানোর জন্য বাঁশ কিনেছেন। ঘরবাড়ি একটু মেরামত করতে বাঁশ লেগেছে। সুযোগ বুঝে বাঁশ গাছের মালিকেরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতিমা শিল্পীরা জানিয়েছেন, গত বছর এক বাঁশের দাম ছিল ২০০ টাকা। এ বার তা হয়েছে ৩০০ টাকা। তবে স্বপন ভট্টাচার্যের মতো যে সব শিল্পীরা আগে ভাগে মাটি মজুত করে রেখেছিলেন, তাঁদের সমস্যা তুলনায় কম। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘জৈষ্ঠ্য মাসেই গঙ্গার মাটি মজুত করে রেখেছিলাম। হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় গঙ্গার চরের মাটি নিয়ে এসেছিলাম। স্থানীয় মাটি তো পাওয়াই যাচ্ছে না। টাকা দিলেও বলা হচ্ছে আরও কয়েকটা দিন দেরি করতে হবে।’’ স্বপনবাবু নাম করা শিল্পী। তাঁর ছেলে সিন্টু ভট্টাচার্যও এখন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। সিন্টু জানালেন, কলকাতা থেকে তারা মাটি নিয়ে আসেন। এ বার তারা ৫৫টি দুর্গা প্রতিমা বানাচ্ছেন। সিন্টু বলেন, ‘‘ঘাটবাওর রামচন্দ্রপুর থেকে অন্য বছর মাটি আনি। কিন্তু এ বার স্থানীয় মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। সব জলে ডুবে গিয়েছে।’’ স্বপনবাবুদের পক্ষে ক‌লকাতা থেকে গঙ্গার মাটি নিয়ে আসা সম্ভব হলেও অনেক স্থানীয় শিল্পীর পক্ষেই তা সম্ভব নয়।

শিল্পীরা জানালেন, প্রতিমা তৈরি করতে এঁটেলমাটি, পলিমাটি এবং বালি মাটির প্রয়োজন হয়। প্রথমে কাঠামো তৈরির সময়ে প্রয়োজন এঁটেলমাটির। তারপর এঁটেলমাটির সঙ্গে ধানের তুষ এবং পাট মিশিয়ে মাটি আঠালো করা হয়। শেষে প্রয়োজন হয় পলি ও বেলেমাটি।

শিল্পীদের মতে, তাঁরা অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করলে হাতে হাজা, ঘা, চুলকানির মতো চর্মরোগ দেখা দেয়। কৃষিজমিতে ব্যবহৃত সার বিভিন্ন তেলের ফলেই ওই সমস্যা বলেও তাঁরা মনে করেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ছত্রাকের আক্রমণের ফলেও মাটির ক্ষার বেড়ে যায়। ওই মাটি ব্যবহার করলে ঘা চুলকানি হতে পারে। মৃৎ শ্রমিকেরা জানালেন, অতীতে মাটিতে বেশি পরিমাণে গোবর সার ব্যবহার করা হত। এখন অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলেই মাটি দূষিত হচ্ছে।

আবার এমনও দেখা যাচ্ছে গঙ্গার মাটি এনেও শিল্পীরা বিপাকে পড়ছেন। কারণ ওই মাটিতে ছোট ছোট শামুক থাকে। তা ছেঁকে নিতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। বাধ্য হয়েই অনেকে কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করছেন। বিকল্প হিসাবে ইছামতীর মাটি অতীতে শিল্পীদের কেউ কেউ ব্যবহার করতেন কিন্তু নদীর জল দূষিত ফলে তারা ওই মাটিও ব্যবহার করতে পারছেন না।

এই পরিস্থিতিতেও প্রতিমার দাম বাড়াতে ভরসা পাচ্ছেন না শিল্পীরা। তাঁদের আশঙ্কা, সে কথা শুনলে অন্যত্র কেনাকাটা সারবেন পুজো কমিটির কর্তারা। ফলে লাভ কমলেও উপায় নেই বনগাঁর শিল্পীদের হাতে!

simanta maitra idol maker financially trouble waterlogged field mud price hike soil price hike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy