ভাসান বাড়াচ্ছে দূষণ। নিজস্ব চিত্র।
বহু দিন হল নাব্যতা ও স্রোত হারিয়ে এখন মৃতপ্রায় ইছামতী নদী। বছরের বেশির ভাগ সময় নদীটি কচুরিপানায় ঢেকে থাকে। শহর এলাকায় কচুরিপানা পচে ও নোংরা আবর্জনা পড়ে এমনিতেই নদীর জল দূষিত। তার উপরে ফি বছর দুর্গা পুজোর পরে নদীতে কয়েকশো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। ফলে নদী-দূষণ আরও বাড়ে। মাছেদের নাভিঃশ্বাস ওঠে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
দশমীর দিন থেকেই শহর ও গ্রামীণ এলাকায় নদীর ঘাটে বারোয়ারি ও বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিমার সঙ্গে ফুল-বেলপাতা প্রতিমার রঙ-সহ পুজোর নানা সামগ্রীও জলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তা জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে দূষণ বাড়ছে। পুজোর আগে বৃষ্টির সময়ে কচুরিপানা সরতে শুরু করেছিল। এখন অবশ্য ফের কচুরিপানা জমে গিয়েছে। বনগাঁ শহরে কিছু দিন আগেও নদী কচুরিপানা সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে ছিল। এখনও বেশির ভাগ অংশে কচুরিপানা আছে।
প্রবীণেরা জানালেন, অতীতে নদীতে স্রোত থাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হলেও দূষণের বিষয়টি সে ভাবে নজরে পড়ত না। কিন্তু এখন তা সকলেই সাদা চোখে দেখতে পাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটি দীর্ঘ দিন ধরে নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবিতে কাজ করছে। কমিটির তরফে সুভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের ফলে ইছামতীর জল প্রতি বছর আরও বেশি করে দূষিত হচ্ছে। যদি প্রতিমা বিসর্জনের আগে ফুল-বেলপাতা, সিদুঁর-সহ পুজোর নানা সামগ্রী জলে না ফেলে উপরে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে কিছুটা ভাল। পাশাপাশি কাঠামো তোলার কাজটাও দ্রুত করতে হবে।’’ চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘নদীর ইকো সিস্টেমটাই এ ভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাছও মরে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’’
তবে এটাও ঠিক যে, বনগাঁ শহর বা গ্রামীণ এলাকায় ইছামতী নদী ছাড়া বিকল্প কোনও জায়গাও নেই যেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায়। ইছামতীর পাশাপাশি কিছু প্রতিমা স্থানীয় নাওভাঙা নদীতেও বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখান থেকে কাঠামো তোলাই হয় না। শহর এলাকায় অতীতে কিছু বড় পুকুর বা জলাশয় ছিল। ধীরে ধীরে তা বেআইনি ভাবে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজনই। বিসর্জনের ফলে যে নদীর জল দূষিত হচ্ছে তা মানছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা নেই। বনগাঁ শহরের অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা অভিযান সঙ্ঘ। সঙ্ঘের কর্তা তুহিন ঘোষ জল দূষণের কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘আগামী বছর থেকে আমরা চেষ্টা করব, প্রতিমা বিসর্জনের আগে পুজোর সামগ্রী নদীতে না ডুবিয়ে বাইরে রাখার। আর বিসর্জনের পরে নিজেরাই কাঠামো তোলার ব্যবস্থা করব।’’ তাঁর দাবি, এমনটা যদি অন্য পুজো উদ্যোক্তারাও করেন, তা হলে জল দূষণ অনেকটাই কমানো সম্ভব। কিছু পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসন যদি বিকল্প ব্যবস্থা করেন, তা হলে তাঁরা আর নদীতে বিসর্জন দেবেন না।
বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা বিসর্জনের আগে ফুল, বেলপাতা-সহ নানা সামগ্রী বাইরে রাখা হয়। আগামী বছর থেকে ওই ব্যবস্থা এখানেও চালু করা হবে।
পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য প্রতিমা বিসর্জনের পরেই দ্রুত কাঠামো সরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হচ্ছে। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘শুক্রবার বিসর্জন শেষ হলে এক সঙ্গে কাঠামো তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করব। নদী দুষণ ঠেকাতে আগামী বছর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের আগে ফুল, বেলপাতা-সহ নানা সামগ্রী জলের ধারে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’’
গাইঘাটা এলাকায় যমুনা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখানে অবশ্য কাঠামো তোলার কোনও ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বা প্রতিমা শিল্পীরা পরে সেগুলি জল থেকে তুলে নিয়ে যান। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘আগামী বছর থেকে আমরা কাঠামো তোলার বিষয়ে পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy