Advertisement
০২ মে ২০২৪

জঙ্গল কেটে সাফ হচ্ছে, নজর নেই বন দফতরের

সাফ হয়ে যাচ্ছে রায়দিঘির সাহেবের দ্বীপের জঙ্গল। যে পারছে এসে গাছ কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছু জ্বালানি, কিছু আসবাব তৈরির কাজে লেগে যাচ্ছে। নৌকো বোঝাই করে গাছ কেটে নিয়ে গেলেও দেখা কেউ নেই।

গাছ কেটে কাঠ বোঝাই নৌকা। নিজস্ব চিত্র।

গাছ কেটে কাঠ বোঝাই নৌকা। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৫
Share: Save:

সাফ হয়ে যাচ্ছে রায়দিঘির সাহেবের দ্বীপের জঙ্গল। যে পারছে এসে গাছ কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছু জ্বালানি, কিছু আসবাব তৈরির কাজে লেগে যাচ্ছে। নৌকো বোঝাই করে গাছ কেটে নিয়ে গেলেও দেখা কেউ নেই।

রায়দিঘি রেঞ্জে মথুরাপুর ২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে দমকল মুসলিম পাড়া-লাগোয়া মণি নদী। প্রায় দেড় কিলোমিটার চওড়া নদীর ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে সাহেবের দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বিঘা এলাকা জুড়ে জঙ্গল। জঙ্গলে ছোট বড় বাইন, মেহগনি, গর্জন, কেওড়াগাছ রয়েছে। সারা জঙ্গল এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে খাঁড়ি।

ক’দিন আগে শীতের দুপুরে ওই জঙ্গলের হালহকিকত দেখার জন্য পাড়ি দেওয়া গেল। নদী পারাপারের জন্য একটি ছোট নৌকা ভাড়া করে মিনিট পনেরো পরে জঙ্গলের কাছাকাছি পৌঁছনো গেল। নদীতে জোয়ার থাকায় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খাড়ির দিয়ে নৌকা নিয়ে গভীর জঙ্গলে ঢোকার সময়ে দেখা গেল, উল্টো দিক থেকে তিন পুরুষ ও এক নাবালক মিলে নৌকা-বোঝাই করে কাঠ কেটে ফিরছে। কাঠ কেটেছেন কেন? প্রশ্নের জবাবে উত্তর মিলল, ‘‘বাড়ির জ্বালানির জন্য সামান্য কিছু ডালপালা জোগাড় করেছি মাত্র। কাঠ কেটেছি কোথায়?’’ কিছু দূর এগোতেই দেখা গেল আরও একটা দল। তারাও কাঠ কেটে নৌকোয় তুলছে।

জঙ্গলের পাশে নৌকা বেঁধে হাঁটু সমান কাদা ঠেলে ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ। বহু পুরনো বড় বড় গাছ অনেক আগেই কেটে নিয়েছে চোরা শিকারিরা। কাটা গাছের গুঁড়ি দিয়ে আবার শাখাপ্রশাখা গজিয়ে গিয়েছে। অনেকটা এলাকা বেমালুম ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।

এলাকাটা হাতের তালুর মতো চেনেন বলে জানালেন দমকল মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা ইয়াসিন গাজি। তিনিই নৌকার দাঁড় টানছিলেন। শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে নদী-নালা-জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে ধরতে। ইয়াসিন বলেন, ‘‘দমকল, কুয়েমুনি, শ্রীধরপুর, মৈপীঠ এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত মাছ ধরে নৌকা নিয়ে এসে জঙ্গল কেটে ফাঁকা করে দিচ্ছে। ওই চোরাই কাঠ জলের দরে চলে যাচ্ছে হোটেলের রান্নার কাজে, ইটের পাঁজায় জ্বালানিতে, বাড়ির রান্না ঘরে। এমনকী, মোটা মোটা গাছ আবাসপত্র তৈরির জন্যও বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।’’

এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, প্রতিনিয়ত ১৫০-২০০ জন চোরাকারবারি জঙ্গলে ঢুকে গাছ কাটছে। পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আয়লার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে বিপদের আশঙ্কাও বাড়ছে। বন দফতরকে বিষয়টি জানালেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। বৃক্ষরোপণ নিয়ে রাজ্য জুড়ে এত হইচই হলেও যে ভাবে গোটা জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে, তা বিপজ্জনক বলে মনে করেন অনেকেই।

রায়দিঘির রেঞ্জার অসীম দণ্ডপত বলেন, ‘‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখব। খুব শীঘ্রই টহলদারি বাড়িয়ে কাঠ চুরি বন্ধের ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forest department Jungles
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE