Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি ঠেকাতে ভাঙড়ে কলকাতা পুরসভা

ভাঙড়ের কাশীপুরের কাঁটাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সালেমা বিবি মঙ্গলবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁকে প্রথমে জিরেনগাছা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

ব্যস্ত: মশা নিধনে। নিজস্ব চিত্র

ব্যস্ত: মশা নিধনে। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

তিনতলা থেকে মৃতদেহ নামাতে ৪৫০ টাকা চেয়েছিলেন ডোম। শুনে রেগে যান পাশে থাকা এক যুবক। কিন্তু বছর সাতাশের মৃত মেয়ের বাবা কান্না ভেজা গলাতেই ওই যুবককে থামিয়ে দিলেন। বললেন, ‘‘মেয়েই যখন থাকল না। তখন ওঁদের সঙ্গে ঝামেলা করে কী হবে। যা চাইছে তাই দিয়ে দেব।’’

ভাঙড়ের কাশীপুরের কাঁটাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সালেমা বিবি মঙ্গলবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁকে প্রথমে জিরেনগাছা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর রক্ত পরীক্ষার পর ওষুধ দিয়ে বাড়িও পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি পরিবারের। একদিন পর ফের জ্বর বাড়লে সালেমাকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু শয্যা না থাকায় তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপরে কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সালেমাকে। শনিবার দুপুরে তিনি মারা যান। ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। বাবা কাশেম মোল্লা বলেন, ‘‘মেয়ে কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। হাসপাতালে নার্সদের বলাবলি করতে শুনেছিলাম মেয়ের ডেঙ্গি হয়েছে। কিন্তু মারা যাওয়ার পর দেখলাম বলা হয়েছে হৃদরোগে মারা গিয়েছে। কিছুই বুঝলাম না। হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া আর কোনও কাগজ দেয়নি।’’

কাঁটাডাঙারই আর এক বাসিন্দা হালিমা বিবি গত ২৪ অক্টোবর মারা গিয়েছেন। তাঁর মেয়ে রোশেনারা বিবি জানান, মা কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। আমরা তাঁকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে যাই। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। জ্বর না কমায় দু’দিন পর ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মা মারা যান। তাঁর দাবি, গ্রামের সবাই বলছে মায়ের ডেঙ্গি হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা জানাননি।

কাশীপুরের জ্বরে আক্রান্ত জোহরা বিবিকেও বাড়ির লোকজন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। সেখানে তিনি মারা যান। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটেও বলা হয় হৃদরোগে মারা গিয়েছেন। কিন্তু পরিবার তা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, জোহরা বিবিরও ডেঙ্গি হয়েছিল। কিন্তু তা লেখা হয়নি।

ভাঙড় ২ ব্লকের ভুমরু, কাঁটাডাঙা, শোনপুর, চিনেপুকুর, বেঁওতা, কাশীপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অনেকে জ্বরে মারা যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ। মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে জেলা প্রশাসনের। যদিও সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি ভাঙড়ে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছে ২০-২২ জন। প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখানকার বহু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে। অনেককে জ্বর কমতেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন ভুমরু গ্রামের রফিকুল মোল্লা। জ্বর নিয়ে আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জ্বর কমতে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর প্লেটলেট ৪০ হাজারের মতো ছিল। এখন গ্রামেরই এক যুবক প্রতিদিন তাঁর রক্ত সংগ্রহ করে কলকাতা থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ গাজির অভিযোগ, গ্রামে জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সরকার ডেঙ্গি চাপতে সব ধামাচাপা দিচ্ছে। মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা হচ্ছে হৃদরোগ। বয়সজনিত কারণেও অনেকের মৃত্যু হচ্ছে বলে হাসপাতাল জানাচ্ছে। কিন্তু তা ঠিক নয়।

প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতর ভাঙড়ে জ্বরে মৃত্যুর কথা মানতে না চাইলেও গত দু’দিন ধরে ওই সব এলাকায় মশা মারতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। শনিবার কলকাতা কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য দফতর থেকে ৭০ জনের একটি দল ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক কৃষ্ণশঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বেঁওতা, হাতিশালা, ধর্মতলা, হাটগাছা, বামনঘাটা এলাকায় ধোঁয়া ও ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে মাইকে প্রচারও চালানো হয়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ভাঙড় ২ ব্লকে ২৫৩ জন জ্বরে আক্রান্তের খবর মিলিছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙড়ে এখনও ডেঙ্গিতে কেউ মারা যাননি। বেশ কিছু এলাকায় মানুষের জ্বর আছে। এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সরাসরি: কার দখলে ‘দিল্লিবাড়ি’?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dengue KMC Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE