Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে চায় বাম

যাঁদের এক সময়ে দেখা যেত তাঁর আশেপাশে, তাঁরাই এখন নিন্দেমন্দ করেন। যাঁদের ভরসায় জিতেছিলেন ভোটে, তাঁদের সঙ্গে নিজেই নাকি দূরত্ব বাড়িয়েছেন— শোনা যায় দলের অন্দরে। এই অবস্থাতেই ভোটের ময়দানে নেমেছেন গোসাবার তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৯
তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর।নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর।নিজস্ব চিত্র।

কাঁটা বিছানো পথে হাঁটতে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীকে।

যাঁদের এক সময়ে দেখা যেত তাঁর আশেপাশে, তাঁরাই এখন নিন্দেমন্দ করেন। যাঁদের ভরসায় জিতেছিলেন ভোটে, তাঁদের সঙ্গে নিজেই নাকি দূরত্ব বাড়িয়েছেন— শোনা যায় দলের অন্দরে। এই অবস্থাতেই ভোটের ময়দানে নেমেছেন গোসাবার তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর।

আর এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জয়ের ফসল ঘরে তোলা যায় কিনা, তা নিয়েই এখন চুলচেরা হিসেবনিকেশ চলছে বিরোধী শিবিরে। আরএসপি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক চন্দ্রশেখর দেবনাথ বলেন, ‘‘তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে আমার কিছু বলা সমীচীন নয়। আমরা আমাদের মতো করে প্রচার করছি। মানুষকে বলছি, ওদের দলের গোলমালের কথা মাথায় রেখে দেখুন, কাকে ভোট দেবেন।’’

তৃণমূল প্রার্থীর অবশ্য দাবি, দলের কিছু লোক বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অপপ্রচার করতে চাইলেও ভোটে তার কোনও প্রভাবই পড়বে না।

ভোটে প্রভাব পড়বে কিনা, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে। তবে ঘটনা হল, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ন্তবাবুর ‘অনুগত সৈনিক’ মাজেদ মোল্লা, চিত্ত প্রামাণিক-সহ একটা বড় অংশকেই এ বার জয়ন্তবাবুর পাশে দেখা যাচ্ছে না। দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, গতবার ভোটে জেতার পরে পরেই বিধায়কের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে তাঁদের।

গত কয়েক বছরে ঘটনা পরম্পরাও তার সাক্ষী।

সম্প্রতি শম্ভুনগর পঞ্চায়েতের বেলতলি বাজারের দখল নিয়ে জয়ন্তবাবু ও চিত্ত প্রামাণিকের শিবিরের মধ্যে মারপিট বেধেছিল। বেশ কয়েকজন জখমও হন। অভিযোগ, জয়ন্ত নস্কর নিজের প্রভাব খাটিয়ে চিত্ত-গোষ্ঠীর ১৮২ জনের নামে মামলা রুজু করেন। সকলে জামিন নিয়েছেন বটে, কিন্তু ভোটের বাজারে কাউকে গা ঘামাতে দেখা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একটি অংশ।

অভিযোগ, এর আগেও বাজারের দখল নিয়ে জয়ন্ত-অনুগামী বলে পরিচিত লোকজন বিরোধী গোষ্ঠীর আনারুলের বাড়ির রান্নাঘরে বোমা মজুত করে রেখেছিল। সেই বোমা ফেটে আনারুলের প্রতিবেশী কারিমুল্লা লস্করের পরিবারের তিন জন এবং তাঁর দুই আত্মীয় মারা যান। ওই ঘটনার জেরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে আসে।

চিত্তবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত এক ব্যক্তির ভুটভুটি চলত চুনাখালি-সাতজেলিয়া, মোল্লাখালি রুটে। অভিযোগ জয়ন্ত-অনুগামীরা সেই ভুটভুটি রুট থেকে তুলে দিয়েছে। এক দিকে, মামলার ভয়ে জর্জরিত এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হয়ে রুজিতে টান পড়ায় তাঁরা কেউ আর ভোটের কাজে নামছে না।

অভিযোগ, চিত্ত প্রামাণিক শম্ভুনগর পঞ্চায়েতের প্রধান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বহু অভিযোগ সামনে আসে। বর্তমানে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান চিত্তবাবুর স্ত্রী সুলতা। বিরোধীদের অভিযোগ, এক সময়ে জয়ন্ত নস্কর নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে চিত্তবাবুর সমস্ত দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেন। পরবর্তী সময়ে অবশ্য দু’জনের সম্পর্কে আড়াআড়ি ফাটল দেখা দেয়। বেলতলি বাজার সহ এলাকার দখল নিয়ে দু’জনের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয়। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে, এ বার ভোটে জয়ন্ত শিবিরের লোকজন চিত্তবাবুর নামে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ১০৭ ধারায় মামলা করেছেন বলে অভিযোগ। চিত্তবাবুর আক্ষেপ, ‘‘চৌত্রিশ বছরের বাম জমানাতেও আমার নামে কখনও ১০৭ ধারায় মামলা হয়নি। অথচ, আমাদের সরকারের আমলে আমারই দলের লোকজন এ ভাবে ফাঁসিয়ে দিল!’’

চিত্তবাবুর ক্ষোভ, ‘‘ভোটে যেন আমিই ওঁর (জয়ন্ত নস্কর) প্রধান প্রতিপক্ষ। এলাকায় ঠিক মতো থাকতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে ভোটের কাজে নামব কী করে?’’ চিত্তবাবুর দাবি, ‘‘দলকে ভালবাসি বলে তা-ও জয়ন্তবাবুকে যেচে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম, আমাদের কী করতে হবে বলুন। উনি এড়িয়ে যান।’’

এক সময়ে জয়ন্তবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মাজেদ মোল্লা বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোটে জিতে সহ সভাপতি হয়েছিলেন। সে সময়ে জয়ন্তবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মধুর। তাতে চিড় ধরার পরে জয়ন্তবাবুই তথ্য জানার আইন ব্যবহার করে মাজেদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন। নিজের রেশন ডিলারশিপ লুকিয়ে মাজেদ ভোটে লড়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা, মামলা-মোকদ্দমা হয়। আখেরে পদ থেকে সরতে হয়েছিল মাজেদকে। মাজেদ বা তাঁর অনুগামীদেরও এ বার ভোট প্রচারে জয়ন্তবাবুর কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মাজেদ।

কী বলছেন জয়ন্তবাবু?

তাঁর কথায়, ‘‘চিত্ত প্রামাণিক তো মেঘের আড়ালে থেকে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইছেন। উনি বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। কিন্তু এতে কিছু যাবে আসবে না। আমি চিত্ত, মাজেদদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের সঙ্গে কোনও ভাবে আপস করব না।’’ তাঁর আরও দাবি, তাঁকে হারাতে চিত্তবাবু নির্বাচন কমিশনের কাছে একাধিক অভিযোগ করেছেন। ইভিএম মেশিনে মানুষই যার যোগ্য জবাব দেবেন।

left TMC candidate election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy