Advertisement
০২ মে ২০২৪
Migrant Workers

এলাকায় কাজের সুযোগ কই, বলছে বহু পরিবার

কাকদ্বীপ মহকুমার প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই হাজার হাজার বেকার যুবক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন। তাঁদের ফেরাতে নয়া প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এই এলাকায়।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সমরেশ মণ্ডল
সাগর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২১
Share: Save:

ভিন্‌ রাজ্যে কাজে গিয়ে গত এক সপ্তাহে সাগরের দু’জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। প্রথম জন মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সুজিত জানা (২২)। তিনি গুজরাতের সুরাটে মুন্দ্রা বন্দরে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। ক্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়। অন্য জন খান সাহেব আবাদ এলাকার বাসিন্দা শেখ জামাল (৫১)। তিনি কেরলে তালসেরি শহরে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করার সময়ে ছাদ থেকে পা পিছলে পড়ে যান। বৃহস্পতিবার দুপুরেই গ্রামে ফিরেছে দেহ।

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা ব্লক মিলিয়ে জনসংখ্যা ১০,০৮,৬৫৩ জন। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিমারি ও লকডাউনের সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে সাগরের প্রায় ১৫-২০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। লকডাউনে প্রায় সকলেই বাড়ি ফেরেন। পরে বেশির ভাগই ভিন্‌ রাজ্যে ফিরে যান। সাগর ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের ৪৩টি গ্রাম রয়েছে। লকডাউনের সময়ে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি গ্রাম থেকে গড়ে ৩৫০ জনের কাছাকাছি বাসিন্দা ভিন্‌ রাজ্যে বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছেন। প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা ব্লকে অতিমারির সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি।

বেশ কয়েক মাস ধরে কেন্দ্র সরকার একশো দিনের কাজের টাকা না দেওয়ায় গ্রামাঞ্চলে তেমন কোনও কাজ মিলছে না বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে সংসারের অভাব মেটাতে অনেকে সপরিবার কেরল, হায়দরাবাদ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, তামিলনাড়ুতে গিয়েছেন। কেউ ইট ভাটায় কাজ করেন, কেউ পোলট্রিতে, কেউ আবার রাজমিস্ত্রির কাজ খুঁজে নিয়েছেন। অনেকে দুবাই, কাতারেও গিয়েছেন কাজের জন্য।

সাম্প্রতিক অতীতে বাংলার বহু শ্রমিক ভিন্‌ রাজ্যে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তাঁদের নিরাপত্তা অভাব আছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন সম্প্রতি। তিনি বলেন, অন্যান্য রাজ্যের শ্রমিকেরা যখন বাংলায় কাজ করতে আসেন, তখন তাঁদের সব রকম খেয়াল রাখে রাজ্য। কিন্তু এ রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা যখন বেশি টাকা পাওয়ার আশায় ভিন্‌ রাজ্যে যান, তখন তাঁদের অনেকের মৃতদেহ হয়ে ফিরতে হয়।

কাকদ্বীপ মহকুমার প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই হাজার হাজার বেকার যুবক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন। তাঁদের ফেরাতে নয়া প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এই এলাকায়। যদিও তাতে কতটা পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। কারণ, এই প্রকল্পে যে টাকা শ্রমিকেরা পাবেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তার তুলনায় দিনমজুর হিসেবে দিল্লি, কেরল, তামিলনাড়ুতে বেশি রোজগার করেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। পরিবারগুলি এমনই দাবি করেছে।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করা কাজ শুরু করেছে। বুধবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কাকদ্বীপে তিন হাজার পরিযায়ী শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছেন। কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পে আরও নাম বাড়বে।’’

সাগরের চেমাগুড়ি এলাকার বাসিন্দা অমিত সাঁতরা চেন্নাইয়ে ইলেকট্রিকের কাজ করছেন বছরখানেক ধরে। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রেশন চলছে। আমি পুজোর সময়ে বাড়ি যাব। তখন তো ক্যাম্প আর চলবে না। পরে আবার ক্যাম্প হলে তখন নাম নথিভুক্ত করাব। গ্রামে প্রতি দিন কাজ পাওয়া যায় না বলেই বাইরে আছি।’’ নামখানার সাতমাইলের বাসিন্দা দেবু জানা বলেন, ‘‘এখানে মাছের ব্যবসা বছরে তিন-চার মাস হয়। কিন্তু সকলে এই কাজ করতে পারে না, সেই সুযোগও হয় না। অন্য কাজ তেমন নেই। তাই কেরলে ইটভাটায় কাজ করি।’’

তৃণমূলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি বাপি হালদারের অবশ্য দাবি, ‘‘২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কমেছে। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করছে রাজ্য সরকার। অন্যান্য রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক অনেক কম।’’

তবে বিজেপির মাথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক বিপ্লব নায়েকের কথায়, ‘‘বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে আছে। এটা বাংলার লজ্জা, সরকারের লজ্জা। রাজ্য সরকার কাজ দিতে পারছে না। আমরা বার বার বলেছি, একশো দিনের কাজের টাকার হিসেব দিন। তা হলে কেন্দ্র টাকা পাঠালে অনেকে কাজ পাবে। কিন্তু তা তারা করছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sagar Island
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE