Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ব্যঙ্গচিত্রে জমে উঠেছে এ বারের ভোট-প্রচার

তৃণমূলের তরফে দেওয়ালে ওই রকম কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র এঁকে বিজেপিকে আক্রমণ করা হয়েছে। পিছিয়ে নেই সিপিএমও। তারাও কার্টুন ব্যবহার করে বিরোধীদের আক্রমণ করছে।

সেয়ানে-সেয়ানে: দেওয়ালে এমন ছবির লড়াই উপভোগ করছেন ভোটারেরা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সেয়ানে-সেয়ানে: দেওয়ালে এমন ছবির লড়াই উপভোগ করছেন ভোটারেরা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৪
Share: Save:

মুকুল রায় পিঠে ঝোলাব্যাগ নিয়ে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে। ঝোলায় লেখা— ‘বিজেপি’। তাঁর হাতে ভিক্ষাপাত্র। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা গৃহকর্ত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে তিনি অনুরোধ করছেন, ‘‘দিদি, আর দু’টো প্রার্থী দিন।’’ হাতজোড় করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলছেন, ‘‘ধার চাহিয়া লজ্জা দেবেন না।’’

তৃণমূলের তরফে দেওয়ালে ওই রকম কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র এঁকে বিজেপিকে আক্রমণ করা হয়েছে। পিছিয়ে নেই সিপিএমও। তারাও কার্টুন ব্যবহার করে বিরোধীদের আক্রমণ করছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যঙ্গচিত্রের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।

দেওয়ালে ব্যঙ্গচিত্র এঁকে সিপিএমের তরফে তৃণমূলকে একহাত নেওয়া হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে— উনুনে কড়াই। এক প্রৌঢ় টুলে বসে। হাতে ঝাঁঝরি। তিনি চপ ভাজছেন। পাশে লেখা, ‘‘চপ আমাদের শিল্প, অন্ধকার আমাদের ভবিষৎ।’’ বিজেপিকে আক্রমণ করে দেওয়ালে কার্টুন এঁকে সিপিএমের তরফে দেখানো হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর হাতে একটি গ্যাস মেশিন। সেটি দিয়ে তিনি বেলুন ফোলাচ্ছেন। পাশে কয়েকটি বেলুন উড়ছে। কোনও বেলুনে লেখা ‘বছরে ২ কোটি চাকরি’, কোনওটায় লেখা ‘সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা’। বেলুনগুলির পাশে লেখা স্বপ্নের ফানুস।

এ বারের ভোটে হাবড়া অশোকনগর এলাকায় কার্টুনের ব্যবহার বেশ জমে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কার্টুনের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল ও বাম। তবে বিজেপি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।

কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র এক ধরনের দ্বি- মাত্রিক চিত্রকলা। ছবি এঁকে এবং ছবির সঙ্গে শব্দ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বিষয়কে উপহাস করা হয়। আমেরিকার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টকে নিয়ে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র বিখ্যাত হয়ে আছে। এ দেশে নেহরুকে নিয়ে তৈরি ব্যঙ্গচিত্রগুলিও খুব আকর্ষক হয়ে রয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে নেহরুকে নিয়ে আঁকা কার্টুনগুলি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

ভোটে কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহারও এ রাজ্যে বেশ পুরনো ব্যাপার। জ্যোতি বসু, ইন্দিরা গাঁধী, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, দেবগৌড়া, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের মতো বহু নেতাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র জনপ্রিয় হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে কার্টুনের ব্যবহার তেমন লক্ষ করা যেত না। এ বার আবার তা ফেরত এসেছে।

কেন এ বার ব্যঙ্গচিত্রের উপরে জোর দিল রাজনৈতিক দলগুলি?

দলগুলির বক্তব্য, গতানুগতিক দেওয়াল লিখন এখন আর মানুষ দেখতে চান না। তাঁরা নতুনত্ব পছন্দ করেন। ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে প্রচার হলে মানুষের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে। এক নেতার কথায়, ‘‘গতানুগতিক দেওয়াল লিখনকে বহু মানুষ এখন দৃশ্যদূষণ বলে মনে করেন।’’হাবড়ার বাসিন্দা, বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে প্রচারের থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বাড়ি গিয়ে প্রচারে আমরা বেশি জোর দিয়েছি।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘বামেরা ষাটের দশক থেকেই ভোটে ব্যঙ্গচিত্রের ব্যবহার করে আসছে। এর মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং বক্তব্য সহজে দর্শকের মনে র্পৌঁছে দেওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়া সেই সুযোগ বেশি করে এনে দিয়েছে।’’

ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে কী বলছে তৃণমূল?

জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘ভোট প্রচারে কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্রের ব্যবহার বাংলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ভোটারদের বেশি করে আকৃষ্ট করা যায়।’’ ভোটের বাজারে কার্টুন ফিরে আসায় খুশি শিল্পীরা। তাঁদেরই একজন সঞ্জয় বৈতাল বলেন, ‘‘কার্টুন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সচেতনতা বাড়ছে দেখে খুব ভাল লাগছে। আগে কার্টুনিস্টদের উপরে আক্রমণ নেমে আসত। কার্টুনের মধ্যে শিল্পীর রসবোধ এবং শিল্পের সৌন্দর্যকে খুঁজে নিতে হবে।’’ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মূলত দলের কর্মী-সমর্থকেরাই ব্যঙ্গচিত্র আঁকছেন। আলাদা করে চিত্রশিল্পীকে দিয়ে আঁকানো হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE