Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জরিমানা কম, তাই কি কমে না গাফিলতি

ওই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘‘আমি নিজেই ৩০-৩৫ জনকে এ অবস্থায় ধরে ফোন বাজেয়াপ্ত করেছি। তবে এখন এই প্রবণতা অনেকটা কমেছে।’’

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা। তাই বুঝি তেমন আমল দিচ্ছিলেন না চালকেরা। মোবাইল কানে নিয়ে গাড়ি চালানোর প্রবণতাও বন্ধ হচ্ছিল না। তাতে রাশ টানতে মাস কয়েক আগে ওই অপরাধটি অন্য একটি ধারার সঙ্গে জুড়ে দেয় উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ। নতুন সেই ব্যবস্থায়, গাড়ি চালানোর সময়ে কাউকে ফোনে কথা বলতে দেখা গেলে বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয় চালকের মোবাইল ফোনটি। পরে তা আদালত থেকে ছাড়িয়ে নিতে হয়। এর ফল মিলতে শুরু করে হাতেনাতেই। প্রথম দিকে প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে মোবাইল আটক হচ্ছিল। কিন্তু এখন মোবাইল আটকে থাকার আতঙ্কে ওই অপরাধ অনেকটাই কমছে বলে দাবি পুলিশের। ওই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘‘আমি নিজেই ৩০-৩৫ জনকে এ অবস্থায় ধরে ফোন বাজেয়াপ্ত করেছি। তবে এখন এই প্রবণতা অনেকটা কমেছে।’’

এ রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় অবশ্য এখনও গাড়িচালক মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ছাড়া পান ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে। এটাই ট্র্যাফিকের নিয়ম। গোটা রাজ্যে এবং কলকাতা পুলিশেও সে নিয়মই বহাল রয়েছে। পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য, জরিমানার টাকার অঙ্ক কম হওয়ায় অপরাধের প্রবণতাও কমছে না।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় অনুযায়ী, বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালালে চালকের জেল ও জরিমানা দু’টিই হতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোও বিপজ্জনক। ফলে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর ধারাটিই মোবাইল ফোন কানে দিয়ে গাড়ি চালানোর সঙ্গে জুড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ। কারণ, কানে ফোন থাকলে চালকের মনসংযোগ নষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সব সময়েই থাকে। এর জেরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার মিছিলে সাম্প্রতিক সংযোজন মুর্শিদাবাদের করিমপুরের বাস দুর্ঘটনা। যার উল্লেখ করেই পুলিশ বলছে, কয়েকটি দুর্ঘটনার দিকে নজর রাখলেই বোঝা যায় এ ভাবে গাড়ি চালানো কতটা বিপজ্জনক।

নিজেদেরই সুরক্ষা শিকেয় তুলে...

• গাড়ি চালাতে চালাতেই কানে উঠে যায় মোবাইল ফোন

• গাড়ির সামনের আসনে বসলেও বাঁধা হয় না সিট বেল্ট

• মোটরসাইকেলে যাতায়াতের সময়ে বাদ পড়ে যায় হেলমেট

• জেব্রা ক্রসিং আছে, পারাপারের সময়ে ব্যবহার করা হয় না

এ ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনটিও ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে বলে আদালতে জানিয়েছে পুলিশ। যে সময়ে মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে, ‘সিজার লিস্টে’ সেই সময়টি লিখে সাক্ষীর স্বাক্ষরও রাখা হচ্ছে। ঘটনার সময়ে মোবাইলটি যে ফোনে ব্যস্ত ছিল, তার তথ্যপ্রমাণ রাখতেই হ্যান্ডসেটি বাজেয়াপ্ত করে নিচ্ছে পুলিশ। ফলে সেটিই আতঙ্কের হয়ে উঠছে চালকের কাছে। কারণ মোবাইল ফোনটি ছাড়ানোর জন্য থানায় নয়, আদালতে যেতে হচ্ছে চালকদের। প্রথমে আপিল, তার পরে বিচার। সে সবের শেষে মোবাইল ফোন পেতে পেতে বেশ কয়েক দিন কেটে যাচ্ছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল কয়েক দিন না থাকায় বিপাকে পড়ছেন চালকেরা। আরও সমস্যা হল, পুরনো সিম লক করে নতুন সিম নিতে গেলেও দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সেই পুলিশেরই।

ওই ধারা যুক্ত করার পরে দেখা যায়, এক এক সপ্তাহে ১২৫ থেকে ১৫০টির মতো মোবাইল আটক হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। অভিজিৎবাবু আরও বলেন, ‘‘আগে এমনও অনেক বার দেখা গিয়েছে যে, একই ব্যাক্তি মোবাইল কানে গাড়ি চালানোর দায়ে একাধিক বার ধরা পড়েছেন। কিন্তু মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা চালু হওয়ার পর থেকে কাউকে একই অপরাধে দ্বিতীয় বার ধরা পড়তে দেখা যায়নি। বিষয়টি প্রচার হওয়ায় অপরাধও কমেছে।’’

তবে মোবাইল তো ব্যক্তিগত জিনিস, তাতে অনেক অনেক প্রয়োজনীয় এবং গোপন বিষয়ও থাকে। সেটা আটকে রাখা কি ঠিক, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। পুলিশকর্তার জবাব, ‘‘এখন বেশির ভাগ অপরাধে মোবাইল সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রমাণ হিসেবে পেশ হচ্ছে।’’ তবে এ সব ক্ষেত্রে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোবাইলটি ‘সুইচ অফ’ করে ‘সিল’ করা
হয় বলে দাবি পুলিশের। ওই ব্যক্তি আদালতে চ্যালেঞ্জ না করলে তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করা হয় না। তবে আর এক পুলিশকর্তার কৌতুক, ‘‘যে মোবাইলে গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই মোবাইল কানে দিয়ে গাড়ি না চালালেই সমস্যা নেই।’’ চালকদের পাল্টা প্রশ্ন, অনেক সময়ে হঠাৎ করেই বিশেষ প্রয়োজনে ফোন ধরতেই হয়। সে ক্ষেত্রে কী করবেন চালকেরা? পুলিশের পাল্টা যুক্তি, সে ক্ষেত্রে গাড়ি বা মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে থামিয়ে কথা সেরে নিতে হবে। কিন্তু ফোন কানে কোনও ভাবেই গাড়ি চালানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE