Advertisement
০৬ মে ২০২৪
MA Pass Shoe Maker

এমএ পাশ যুবকের জুতো সারাইয়ের দোকান

বিএ পাশ করে সাত-আট বছর ধরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ফুলসরার বাসিন্দা স্বপন ঘোষ।

নিজের দোকানে জুতো সেলাই করছেন সুভাষচন্দ্র।

নিজের দোকানে জুতো সেলাই করছেন সুভাষচন্দ্র। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ০৫:৪৮
Share: Save:

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের খানসাহেব গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মণ মণ্ডল এমএ পাশ। বিএড করেছেন। সরকারি চাকরির জন্য বহু পরীক্ষা দিয়েও হাত খালি। উচ্চ প্রাথমিকের পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি জোটেনি। আপাতত দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে কিছু টাকা পান।

লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘এমএ-বিএড করেও চাকরি পেলাম না। পরীক্ষায় পাশ করেও বসে আছি। তবে সংসার তো চালাতে হবে। তাই পানের বরজে কাজ করি। ছেলেমেয়েদের পড়াই। আমাদের রাজ্যের যা অবস্থা, কবে সরকারি চাকরি পাব, তার ঠিক নেই।’’ লক্ষ্মণের আক্ষেপ, ‘‘যদ্দিনে ডাক আসবে, তখন হয় তো চাকরিতে জয়েন করার বয়সই পেরিয়ে গিয়েছে!’’কাকদ্বীপের বসন্তপুর এলাকার বাসিন্দা সৌমেন দাস ২০১২ সালে স্নাতক হয়েছেন। একাধিক পরীক্ষায় বসেন। চাকরি জোটেনি। এখন প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে সংসার চালান। সৌমেনের কথায়, ‘‘শুনছি চাকরি পেতে হলে না কি টাকা দিতে হয়। আমার সে ক্ষমতা নেই। তাই হয় তো চাকরি পাইনি। বাধ্য হয়ে টিউশন পড়াই। মাঝে মধ্যে ছোটখাট সংস্থায় কিছু কাজ করি।’’রাজ্যের নানা প্রান্তেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন বহু উদাহরণ।

বিএ পাশ করে সাত-আট বছর ধরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ফুলসরার বাসিন্দা স্বপন ঘোষ। এক সময়ে ছাত্র পড়াতেন। তেমন উপার্জন হত না। চাঁদপাড়া বাজারে লটারির দোকানে কাজ করেছেন কিছু দিন।কখনও ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রিও করেছেন। গত দশ বছর ধরে দিনমজুরি করে সংসার সামলাচ্ছেন। স্বপনের কথায়, "বনগাঁ পুরসভার নিয়োগ পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ ভাল হয়েছিল।ভেবেছিলাম, কাজটা হবে। হল না। এখন চারিদিকে পুরসভায় নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ শুনতে পাই। হয় তো সে কারণেই ভাল পরীক্ষা দিয়েও কাজ পাইনি।"

স্বপন জানালেন, মাসে ৬-৭ হাজার টাকা রোজগার। এ দিকে, একমাত্র ছেলে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। তার পিছনেও বহু টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি দিন ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। বাজারে বহু ধারদেনা। স্বপন বলেন, ‘‘একটা সরকারি কাজ যদি মিলত, তা হলে হয় তো রোদে পুড়ে দিনমজুরি করতে হত না।"

ইতিহাসে এমএ করেছিলেন হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের গোবিন্দকাটির বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র দাস। বিএড ডিগ্রিও হয়েছে। চাকরির পরীক্ষায় বসে লাভ হয়নি। বহু বছর ধরে জুতো সেলাই করেন তিনি। পাশাপাশি, ছোটদের পড়ান। সব মিলিয়ে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা রোজগার। বছর চুয়াল্লিশের সুভাষ জানান, অভাবের সংসারে বিভিন্ন মানুষের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, চাকরি পেয়ে অনেকের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। ২০১৫ সালের শেষ দিকে উচ্চ প্রাথমিকের পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে উত্তীর্ণ হন। ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। প্যানেলে নাম উঠে। কিন্তু সেই প্যানেলের উপরে মামলা হওয়ায় হাই কোর্টে মামলা চলছে। সুভাষের এখনও ক্ষীণ আশা আছে, হয় তো চাকরির ডাক আসবে। তবে তখন চাকরিতে যোগ দেওয়ার বয়স থাকবে কি না, সেটাই ভাবায়।

সুভাষ জানালেন, চাকরি পেয়ে যাবেন এই আশায় ২০১০ সালে বিয়ে করেছিলেন। আর্থিক সমস্যা থাকায় সংসারে অশান্তি শুরু হয়। স্ত্রী বছর তিনেক বাদে চলে যান। মায়ের অসুখের সময়ে চিকিৎসার খরচ সংগ্রহ করতে পারেননি সুভাষ। মারা গিয়েছেন মা। সেই কষ্ট কুড়ে কুড়ে খায়। এখন ভাইয়ের সংসারে থাকেন সুভাষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hingalganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE