Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ভোট দিলেন না অনেকে

পুরভোটের দিন ব্যাপক অশান্তি দেখেছিলেন বসিরহাটের মানুষ। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ সর্বাত্মক আকার নিয়েছে। সোমবার মহকুমার দু’টি পুরসভার ৯টি বুথের পুনর্নির্বাচনেও গোলমাল এড়ানো গেল না। পুলিশকে লক্ষ করে বোমা পড়ল। বহিরাগত হঠাতে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে হল। বুথের মধ্যেই বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীকে।

নাগরিক কমিটির মিছিল বসিরহাটে।

নাগরিক কমিটির মিছিল বসিরহাটে।

নির্মল বসু
টাকি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

পুরভোটের দিন ব্যাপক অশান্তি দেখেছিলেন বসিরহাটের মানুষ। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ সর্বাত্মক আকার নিয়েছে। সোমবার মহকুমার দু’টি পুরসভার ৯টি বুথের পুনর্নির্বাচনেও গোলমাল এড়ানো গেল না।

পুলিশকে লক্ষ করে বোমা পড়ল। বহিরাগত হঠাতে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে হল। বুথের মধ্যেই বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীকে। শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে দু’টি বুথে ভোটই দিতে যাননি বেশির ভাগ মানুষ। বসিরহাটের এসডিপিও অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। ভোটের দিন বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বহিরাগতদের ধরতে ভোটের আগের দিন এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়।

ঘটনা হল, এ দিন পুলিশকে কিছুটা অন্য চেহারায় দেখা গিয়েছে। টাকি পুরসভার যে দু’টি বুথে পুনরায় ভোট নেওয়ার কথা ছিল (৪/৬ ও ৪/৭) সেখানে চোখে পড়ার মতো বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশের ভূমিকাও ছিল সদর্থক। জনা পনেরো বহিরাগত মুখকে ঘোরাফেরা করতে দেখে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। পালানোর সময়ে ওই দুষ্কৃতীরা একটি বোমা ছোড়ে। পুলিশের গাড়ির সামনে এসে ফাটে বোমাটি। তবে কেউ জখম হননি। পুলিশ তাড়া করে এক জনকে ধরেও ফেলে। ওই দু’টি বুথে দিনের শেষে ৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।


এসডিপিও অফিসের সামনে ক্ষোভ।

তবে পুলিশ-প্রশাসনের মুখ রক্ষা হয়নি বসিরহাটের ২টি বুথে। হরিশপুরের কেনারাম স্মৃতি বিদ্যামন্দির ও হরিশপুর পল্লিমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের দু’টি বুথে (৮২ ও ৮৩ নম্বর) এ দিন পুনরায় ভোট নেওয়া হয়। কিন্তু দিনের শেষে ৮২ নম্বর বুথের ৮৭০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩৯ জন। অন্য বুথটিতে ১১১১ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ১১১ জনের। এলাকার বাসিন্দারা একজোট হয়ে ঠিক করেছিলেন, ভোট দিতে যাবেন না। তৃণমূল নেতা দীপেন্দু বিশ্বাস সোমবার এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এবং সংলগ্ন আরও দু’টি বুথে পুনরায় ভোট নেওয়া না হলে তাঁরা ভোট দেবেন না বলে জানিয়ে দেন নাগরিকেরা।

ভোটের দিন এই ৪টি বুথে তৃণমূল-আশ্রিত বহিরাগতরা এসে বোমাবাজি করে ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে ছাপ্পা ভোট দেয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেস প্রার্থী সুকেশ ঘোষালের পিঠে খুর মারা হয়। প্রতিবাদে দু’টি ইভিএম ভাঙচুর করে জনতা। কংগ্রেসের লোকজনও তাতে সামিল ছিল। ওই দু’টি বুথেই ফের ভোট নেওয়া হয়েছে। যদিও সুকেশবাবু জানান, এখানকার ৪টি বুথে ছাপ্পা ভোট হয়েছে। শুধু দু’টিতে ফের ভোট নেওয়ার কোনও মানেই হয় না। এরই প্রতিবাদে বেশির ভাগ স্থানীয় মানুষ ভোট দিতে যাননি।

এলাকার বেশির ভাগ মানুষের টিকি দেখা না গেলেও ৮২ নম্বর বুথের সামনে এ দিন চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল তৃণমূল প্রার্থী দেবদূত খাঁড়াকে। পুলিশ অবশ্য পরে তাঁকে ধমক দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। দেবদূতবাবু বলেন, ‘‘কংগ্রেস নিজেরাই বুথে ঢুকে ইভিএম ভাঙচুর করেছে। আবার নিজেরাই ভোট না দেওয়ার জন্য রবিবার রাত থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। সেই ভয়েই বেশির ভাগ মানুষ বেরোননি।’’ তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলিও দাবি করেন, ‘‘বিরোধীরা নিজেরাই বিভিন্ন জায়গায় ইভিএম ভেঙে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’’

তবে, শাসক দলের চেয়েও পুলিশের ভূমিকায় যে হারে ক্ষুব্ধ জনতা, তার আলোচনা সারা ক্ষণই শোনা যাচ্ছে বসিরহাটের আনাচ-কানাচে। পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ জমেছে। এক কনস্টেবলকে বলতে শোনা গেল, ‘‘যে সব মস্তানদের অবিলম্বে ধরা উচিত, তারাই আমাদের উল্টে নির্দেশ দিচ্ছে। কর্তাদের তো মাঠে-ময়দানে যেতে হয় না। কিন্তু এরপরে আমাদের কোথাও আইন রক্ষার কাজে পাঠানো হলে কেউ আর পাত্তা দেবে? এ সব দেখেশুনে উর্দি পরতেই লজ্জা হচ্ছে!’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE