Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Dengue

ব্লিচিংয়ের পাশেই ভনভন করছে মশা

তারপরেও যে প্রতিদিন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। নৈহাটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে ছেলে আবদুলের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন গৌরীপুরের মলিনা বিবি।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

নালার ধারে ব্লিচিং পাউডারের ছড়াছড়ি। নাকে, মুখে কাপড় বেঁধে পুরসভার সাফাই কর্মীরা যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে নেমে পড়েছেন রাস্তায়। অলি, গলি, তস্য গলি— কোথাও বাদ রাখছেন না। হুসহুসিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে কামানের মুখ দিয়ে। মুহূর্তে সাদা হয়ে যাচ্ছে সামনেটা। মশা তো কোন ছার, মানুষও পালাবে সেই ধোঁয়ার ঠেলায়।

কিন্তু তারপর?

তারপরেও যে প্রতিদিন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। নৈহাটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে ছেলে আবদুলের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন গৌরীপুরের মলিনা বিবি। গায়ে লাল চাকা চাকা দাগ আর ধুম জ্বর। বললেন, ‘‘পুরসভা তো নিয়ম করে মশা মারতে কামান দাগছে, ব্লিচিং পাউডারও ছড়াচ্ছে। কিন্তু ঘর ভর্তি মশা। খাটের নীচে, আলমারির পিছনে লুকিয়ে থাকছে। চোখের সামনেই কামড়ে চলে যাচ্ছে। এত কিছু দিয়েও তো মশা কমছে না। সারা দিন কি আর মশারির মধ্যে থাকা সম্ভব?’’

পুরসভা মশা মারতে তৎপর হলেও বাসিন্দাদের মনে এই প্রশ্নটা ক্রমশ বাড়ছে। ইছাপুরের বাসিন্দা অনিমেষ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের এখানেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে কেউ কেউ। সে তো সব জায়গাতেই হচ্ছে। কিন্তু মশা এত বেড়ে গিয়েছে কী করে বুঝতে পারছি না। মশার ধোঁয়া, ব্লিচিং সবই তো দিচ্ছে পুরসভা। কিন্তু ঘরের মধ্যে মশার যেমন দৌরাত্ম্য ছিল, তেমনই আছে।’’

কাঁচরাপাড়ার ডাঙাপাড়াতেও মশার উৎপাতে নাজেহাল মানুষজন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুই তরুণীর। মৃত নয়না হেলার বাবা রাজেশ হেলা নিজে সাফাই কর্মী। নিজের হাতেই ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছেন বাড়ির সামনে। কিন্তু তাতে মশা কমল কই? বরং ছড়ানো ব্লিচিংয়ের উপরেই ঘুরপাক খাচ্ছে মশার দঙ্গল। হাতের চাপড়ে খান কতক মরলেও মশার বংশ ধ্বংস হওয়ার লক্ষণ নেই।

কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা শম্ভু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মশা নিয়ে মস্করা করছে পুরসভা। নালার পাশে ব্লিচিং ছড়িয়ে কখনও মশা মারা যায়? মানুষকে বোকা বানিয়ে অকারণ সরকারি টাকা নষ্ট হচ্ছে।’’

শিল্পাঞ্চলের চিকিৎসক বিজনবিহারী রথের কথায়, ‘‘ব্লিচিং বা ওই জাতীয় কীটনাশক পোকা-মাকড়, বা সাপের উৎপাতে কাজে লাগে। কিন্তু এডিস ইজিপ্টাই জাতীয় মশা মারতে ব্লিচিংয়ের কোনও ভূমিকা নেই। তেল ছড়ালেও তা শুধুমাত্র যে জায়গায় লার্ভা থাকে, সেখানে কাজে দেয়। খোলা জায়গায় ছড়িয়ে মশা মারা যায় না।’’

এ সব তত্ত্ব অবশ্য মানতে নারাজ উত্তর ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান মলয় ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘কে বলে কাজ হচ্ছে না? অনেক আগে থেকে শুরু করেছিলাম ব্লিচিং ছড়ানো। দিব্যি কমেছে মশা। কামান দেগেও উপকার হয়েছে অনেক।’’

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। নিজে পতঙ্গবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। বললেন, ‘‘একটা বৃষ্টির পরে যখন চড়চড়িয়ে রোদ ওঠে, তখনই মশার বংশবিস্তার হয়। আর এডিস ইজিপ্টাইদের দৌরাত্ম্যটা থাকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ আর সেপ্টেম্বর-নভেম্বর সময়টায়। এই সময়ে ২২-৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে। মশার লার্ভা বাঁচে সাত দিন। পরিস্কার জল জমে থাকে। সেই সব জায়গা খুঁজে যদি কেরোসিন বা মোবিল ছড়ানো যেত, তা হলেই সব থেকে বেশি প্রতিরোধ করা যেত।’’

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ শান্তনু ঝা কল্যাণীর পুরপ্রধান ছিলেন দীর্ঘ দিন। পুরসভার এই মশা-নিধন যজ্ঞ দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভস্মে ঘি ঢালা হচ্ছে। এত নতুন আবাসন, যেখানে লোক আসেনি তার শৌচাগারের কমোড, সেপটিক ট্যাঙ্ক ডেঙ্গির মশার আড়ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquitoes bleaching powder Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE