জলের দাবিতে মহকুমাশাসকের দফতরের পথে বাসিন্দারা। ছবি: নির্মল বসু।
দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জলের সমস্যা চলছে বসিরহাট পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন এই এলাকার মানুষ। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।
মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি বলেন, ‘‘পাইপের লেভেল নিয়ে পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। সে কারণে ঠিকমতো জল পৌঁছচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য শীঘ্রই ব্যবস্থা করা হবে।’’
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর এবং পুরসভা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বাস। এ ছাড়াও আছে বেশ কয়েকটি হাউজিং, সরকারি ও বেসরকারি দফতর, হাসপাতাল, নার্সিংহোম, অনুষ্ঠান বাড়ি। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি ভাবে ৭ হাজারের উপরে পরিবার পানীয় জলের লাইন নিয়েছে। কয়েকটি পাম্প হাউস থেকে প্রত্যেক দিন যে পরিমাণ জল ছাড়া হয়, তাতে পুরবাসীর প্রয়োজন মেটে না। অবৈধ ভাবেও অনেকে বাড়িতে জলের লাইন নিয়েছেন বলে দাবি পুরসভার। মূল পাইপ ফুটো করে পাম্পের মাধ্যমে জল টানা হয় বলে অভিযোগ। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, জলের অভাব তো রয়েইছে, তার মধ্যে আবার জলের অপচয়ও হয়। সে কারণেও জল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বসিরহাট পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ পানীয় জলের দাবিতে হাঁড়ি, কলসি, বালতি নিয়ে মিছিল করে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। রীতা দাস, অন্বেষা মণ্ডল, সংযুক্তা রায়, বীণা বসু বলেন, ‘‘এক বছর ধরে পানীয় জলের কষ্টে ভুগছি। জল কিনে খেতে হচ্ছে। পুরসভার জল মিলছে না।’’
তাঁরা জানান, জলের অভাবে মাঝে মধ্যে বাড়িতে রান্নাও বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ঘর সংসার ফেলে মহিলারা দিনের পর দিন কাউন্সিলর, পুরপ্রধান এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত রায়, তাপস রায়, প্রশান্ত ঘোষ, দেবপ্রসাদ মণ্ডলরা জানান, পানীয় জল মিলছে না বলে বসিরহাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য তাঁর তহবিল থেকে ১ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। ওই টাকাতেই পুরসভা নতুন পাইপ বসিয়েছিল। কিন্তু পুরনো পাইপের লেভেল সমান না হওয়ায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ জানাতে গেলে এ ওর নামে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে।’’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পারমিতা মজুমদার বলেন, ‘‘জলের লেয়ার না থাকায় অন্য ওয়ার্ডের পাম্প হাউস থেকে জল আনতে হবে। সে জন্য ৯০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। অত টাকা কাউন্সিলর তহবিলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
এ বিষয়ে মহকুমা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার জয়দেব মণ্ডল বলেন, ‘‘এই এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় জলের পরিষেবা কম। তার উপরে অতিরিক্ত রাস্তার কল বসানো হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ ভাবে পাম্পের মাধ্যমে মূল পাইপ থেকে সরাসরি জল তুলে নেওয়ায় জলের সমস্যা হচ্ছে।’’ প্রাক্তন বিধায়ক তহবিলের টাকায় পুরসভার পাইপলাইন ঠিকঠাক বসাতে না পারার কারণেও ওয়ার্ডের মানুষ ঠিকমতো জল পাচ্ছেন না। জলের গতি বাড়াতে গেলে ওই ওয়ার্ডে একটি পাম্পিং স্টেশন জরুরি বলে জানান জয়দেববাবু।
পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘বিধায়ক কোটার টাকায় পুরসভা এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের ইনঞ্জিনিয়ারেরা পাইপ পোঁতার কাজ করেছেন। ওয়ার্ডে পানীয় জলের পরিষেবার আরও উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy