Advertisement
১৭ মে ২০২৪
নোট-কাহন/ ২

বাড়িতে অনুষ্ঠান, হাতে টাকা না থাকায় চিন্তা

শ্রাদ্ধ আগে নাকি বিয়ের অনুষ্ঠান? দুই ২৪ পরগনার নানা জায়গায় ব্যাঙ্কের সামনে সর্পিল লাইনে ইতিউতি উঁকি মারছে এই প্রশ্ন।

নির্মল বসু ও দিলীপ নস্কর
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

শ্রাদ্ধ আগে নাকি বিয়ের অনুষ্ঠান?

দুই ২৪ পরগনার নানা জায়গায় ব্যাঙ্কের সামনে সর্পিল লাইনে ইতিউতি উঁকি মারছে এই প্রশ্ন।

সাধারণের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলায় ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। তবে বিয়ে বাড়ির ক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে ঊর্ধ্বসীমা দু’পক্ষের জন্য মোট আড়াই লক্ষ টাকা স্থির করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে অনেককে। কিন্তু বিয়ে বাড়ির তো তবু নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু পারলৌকিক কাজ, অন্নপ্রাশন, উপনয়ণের মতো সামাজিক কাজের ক্ষেত্রে কী হবে? বর্তমানে এই অনুষ্ঠানগুলির আয়োজনের খরচও তো লাখ খানেকের কম নয়।

সন্দেশখালি থানার মঠবাড়ির পেতুয়াধানীহাটির মধুসূদন বাড়ুইয়ের সম্প্রতি পিতৃবিয়োগ হয়েছে। আগামী ২৮ নভেম্বর তাঁর বাবার পারলৌকিক কাজ হওয়ার কথা। ৩০ নভেম্বর নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠান। নিমন্ত্রিতদের কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজ কী ভাবে হবে সেটা ভেবে পাচ্ছেন না মধুসূদনবাবু। তিনি জানান, বাড়িতে থাকা সব নগদ খরচ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক কিংবা পোস্ট অফিসে গিয়ে বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়েও কিছু লাভ হচ্ছে না। এটিএমে টাকা নেই। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘নগদ টাকা নিয়ে সমস্যায় বাবার পারলৌকিক ক্রিয়ার কাজ কী ভাবে শেষ করবো ভেবে পারছি না। বিয়ের জন্য যদি আড়াই লক্ষ টাকা তোলা যায় তাহলে পারলৌকিক অনুষ্ঠানের জন্যও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হোক।’’

হিঙ্গলগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অশোক মণ্ডল। নভেম্বরের শেষে তাঁর সদ্যেজাত মেয়ের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান। কার্ড ছাপা হয়ে গিয়েছে। অশোকবাবুর ক্ষোভ, ‘‘খুচরোর অভাবে কাজের লোক মিলছে না। মাঠে ধান পড়ে রয়েছে। সব ছেড়ে প্রতি দিন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। অনুষ্ঠান কীভাবে হবে বুঝতে পারছি না।’’

ডায়মন্ড হাববারের চাঁদনগর ঘোষপাড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী গোপাল ঘোষের মায়ের পারলৌকিক কাজ সামনের রবিবার। দিন কয়েক আগে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলে তাঁর পরিবারের এক সদস্য। সঙ্গে ছিল শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণপত্র। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, বাকি গ্রাহকেরা যে পরিমাণ টাকা তুলতে পারছেন তাঁরা তার বেশি পারবেন না। গোপালবাবুর দাবি, ‘‘পুরোহিত এবং নাপিত ছাড়া বাকি সব কিছুই প্রায় ধারে কাজ করতে হচ্ছে। কমাতে হয়েছে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা।’’

সরকার ঘোষণা করলেও সোমবার পর্যন্ত বিয়ের কার্ড দেখিয়ে ব্যাঙ্কে আলাদা কোনও সুবিধা মেলেনি বললেই চলে। বাদুড়িয়ার নূর হোসেন মোল্লার মেয়ের বিয়ে ৮ ডিসেম্বর। কার্ড ছাপানো হলেও এখনও প্রায় কাউকে নিমন্ত্রণ করেননি। কারণ, নগদ টাকা নেই। তিনি জানান, বিয়ের জন্য বাড়তি টাকা দেওয়ার কোনও নির্দেশিকা এখনও আসেনি। বিকল্প হিসেবে এটিএমের কথা বলা হলেও সোমবার পর্যন্ত দুই ২৪ পরগনার মহকুমা শহরগুলিতে গুটিকয় ছাড়া এটিএমগুলিতে টাকা ছিল না বললেই চলে। গ্রামের দিকের এটিএমগুলির অবস্থা তো আরও খারাপ।

পরিস্থিতি কবে বদলাবে? কন্যদায়গ্রস্ত বাবা থেকে পিতৃদায়গ্রস্ত ছেলে— সকলের মুখে এখন এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Occasion Money crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE