Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ওষুধের দোকানের ভিতরেই রয়েছে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা

নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়ির এক তলায় বড় হোর্ডিংয়ে লেখা, ‘‘দি রয়েল নার্সিংহোম’। হোর্ডিং না দেখলে অবশ্য সেটি বসতবাড়ি না নার্সিংহোম বোঝা সম্ভব নয়।

সিল করা হচ্ছে রায়দিঘির একটি নার্সিংহোম।  নিজস্ব চিত্র।

সিল করা হচ্ছে রায়দিঘির একটি নার্সিংহোম। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়দিঘি ও ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়ির এক তলায় বড় হোর্ডিংয়ে লেখা, ‘‘দি রয়েল নার্সিংহোম’। হোর্ডিং না দেখলে অবশ্য সেটি বসতবাড়ি না নার্সিংহোম বোঝা সম্ভব নয়।

ডায়মন্ড হারবার শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের ওই নার্সিংহোমের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার গিয়েছিল প্রশাসনের একটি দল। দেখা যায়, নার্সিংহোমটির রেজিস্ট্রেশনই নেই। তার পর সেটি সিল করা হয়। এর পর সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কাশীনগর মোড়ের কাছে মা পারুল নার্সিংহোমে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের দ্রুত নথি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।

উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় শিশু পাচারের ঘটনার পরে বিভিন্ন নার্সিংহোমে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এ দিন ডায়মন্ড হারবার মহকুমার দু’টি নার্সিংহোমে হানা দেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা যখন রায়দিঘি রোডের পাশে মান্নারচক গ্রামের দি রয়েল নার্সিংহোমে যান তখন সেখানে বসেছিলেন এক মহিলা। নার্সিংহোমটিতে এ দিন কোনও রোগী ভর্তি ছিলেন না। প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চালানোর পরে চিকিৎসকের চেম্বারটি দেখতে চান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। কিন্তু ঘরের চাবি না পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ ওই ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে কয়েকটি নথি বাজেয়াপ্ত করে। তথ্যে গরমিল থাকার অভিযোগে নার্সিংহোমের দু’টি গেট সিল করা হয়। এর পর মা পারুল নার্সিংহোমে মিনিট পনেরো থেকে প্রতিনিধি দলটি ডায়মন্ড হারবারে ফিরে আসে। এ দিন বিকেলে জয়নগরের একটি নার্সিংহোমও পরিকাঠামো না থাকার অভিযোগে সিল করে দেওয়া হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার বলেন, ‘‘বিভিন্ন নার্সিংহোমে অভিযান চলছে। বৈধ নথি না থাকায় রায়দিঘির একটি নার্সিংহোম সিল করা হয়েছে। আর একটি নার্সিংহোমে দ্রুত নথি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

মঙ্গলবার সাগরের কয়েকটি হাতুড়ের চেম্বার এবং নার্সিংহোমে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের আরেক প্রতিনিধি দল। এ দিন মুড়িগঙ্গা ১ নম্বর পঞ্চায়েতের কষতলায় হাতুড়ে প্রভাত মাইতির চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে এক দিকে ওষুধের দোকান। অন্য দিকে কাঠের চৌকিতে পলিথিন পেতে রয়েছে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পেটের সমস্যা থেকে রাত বিরেতে সন্তান প্রসব সবই হয় ওখানে। সেখানে রোগী ভর্তি জায়গাটি সিল করে দেওয়া হয়।

এ দিন রামকরচর পঞ্চায়েতের নরহরিপুরের হাতুড়ে গোবিন্দ মণ্ডলের ‘মণ্ডল সেবা কেন্দ্রে’ গিয়ে দেখা যায়, প্রায় পরিকাঠামোহীন জায়গায় চার জন রোগী ভর্তি। তাঁদের সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই সেবা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নথি জাল করে কলকাতার একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সেখানে তালা ঝোলানো হয়।

এ দিনই রুদ্রনগরের দিগন্ত নামে একটি ল্যাবরেটরি, আরোগ্য নামে একটি এক্সরে ক্লিনিক এবং আইল্যান্ডস নামে একটি নার্সিংহোমে অভিযান চলে। প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় ল্যাবরেটরি ও ক্লিনিকটি সিল করা হয়। বেহাল পরিকাঠামোর অভিযোগে নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার সিল করা হয়। যদিও ওই নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা রোগীদের দাবি, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই তাঁদের সেখানে ভর্তি থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

বেআইনি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে জানিয়ে ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাইরে থেকে কয়েক জন চিকিৎসক বেআইনি চেম্বার এবং নার্সিংহোমে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন সরকারি চিকিৎসকও রয়েছেন। বিষয়টি নজরে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medicine shop Patient admission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE