মৃত: নির্মল দাস
ভোরের আলো সবে ফুটবে ফুটবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফেরার কথা নির্মল দাসের।
ভোর ৫টা নাগাদ শৌচকর্ম সারতে গিয়েছিলেন রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালের বাইরে পুকুর পাড়ে। ঘাটে পা পিছলে তলিয়ে যান। যখন তোলা হল তাঁকে জল থেকে, তখন দেহে আর প্রাণ নেই বছর বাহান্নর ওই ব্যক্তির। উত্তর কুমড়োপাড়ার নির্মলবাবুর বুকে ব্যথা হওয়ায় তাঁকে সোমবার ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। রাতের দিকে চিকিৎসক এসে দেখে বলেন, অবস্থা এখন ভালর দিকে। আর ভর্তি রাখার দরকার নেই। ছেড়ে দেওয়া হবে মঙ্গলবার সকালে। রাতে তাঁর সঙ্গে বাড়ির লোকজনও ছিলেন। কিন্তু তারপরেও এই বিপত্তি।
কেন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাইরে পুকুর পাড়ে যেতে হয়েছিল নির্মলবাবুকে?
এই প্রসঙ্গেই উঠে আসছে অদ্ভূত তথ্য। হাসপাতালের শৌচালয়ে নাকি জলই ছিল না। বিএমওএইচ প্রণবেশ হালদার বলেন, ‘‘দু’টি পাম্প আছে। একটি খারাপ। তবে শৌচালয়ে যে জল নেই, তা স্বাস্থ্যকর্মী বা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়াররা জানাতে পারতেন।’’ তিনি জানান, ভবন সংস্কারের কাজ চলায় ৩ নম্বর গেটটি খোলা ছিল। সেখান দিয়েই রোগী বেরিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
কিন্তু তা বলে হাসপাতালের শৌচালয়ে জল থাকবে না? পাম্প সারানোর ব্যবস্থা হবে না?
ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষজন। পুলিশ গিয়ে কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। নির্মলবাবুর বৌমা রাতে ছিলেন হাসপাতালে। বলেন, ‘‘বারান্দায় ৬ নম্বর বেডে ছিলেন শ্বশুরমশাই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে বললেন, একটু বাথরুম থেকে ঘুরে আসি। ফিরে এসে বললেন, জল নেই, বাইরে যেতে হবে।’’ জানা গিয়েছে, নির্মলবাবুকে জলে তলিয়ে যেতে দেখেছিলেন স্থানীয় এক মহিলা। তিনিই চিৎকার করে লোক জড়ো করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জল থেকে তোলা হয় নির্মলবাবুকে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
ওই হাসপাতালে পরিকাঠামোর সমস্যা দীর্ঘ দিনের। হাসপাতাল ভবন সংস্কার না হওয়ায় বছরখানেক আগে ছাদের চাঙড় খসে দু’জন রোগী জখম হয়েছিলেন। ৬০ শয্যার হাসপাতালে প্রায় সব সময়েই শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসক বা নার্সের সংখ্যা অনেক কম। শৌচাগারের জল না থাকায় রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের ক্ষোভ চরমে। এই মুহূর্তে ১০৪ জন রোগী ভর্তি। তাঁরা জানান, সোমবার থেকেই জল ছিল না। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাধিকবার বলা হয়েছিল। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেননি। ভিতরের পাখাগুলি প্রায় সব খারাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy