বহু মানুষের ভরসা এই স্টেশন। নিজস্ব চিত্র
লোকসানে চলা ক্যানিং-সহ রাজ্যের ৮টি রেললাইন তুলে দেওয়ার কথা বলেছিল কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক। তাতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন লাইনের নিত্যযাত্রীদের মধ্যে। অনেকেরই দাবি, রেললাইন তুলে না দিয়ে রেলমন্ত্রক লোকসান কমাতে রেলের দখলকৃত জমি উদ্ধার করে আয় বাড়াতে পারে।
কলকাতার সঙ্গে জলপথের পাশাপাশি সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৮৬২-৬৩ সালে লর্ড ক্যানিং, লর্ড এলগিনের সময়ে ক্যানিং রেলপথটি চালু হয়। দেশের তৃতীয় প্রাচীন রেলপথ এটি। কলকাতা থেকে রেলপথে ক্যানিংয়ের দূরত্ব ৪৬ কিমি। সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশদ্বার ক্যানিং। সুন্দরবনের ১৯ ব্লকের মধ্যে প্রায় ৬টি ব্লকের মানুষ ক্যানিং রেলপথ দিয়ে শহর ও শহরতলিতে যাতায়াত করেন। ফলে লাইনের গুরুত্ব যথেষ্ট।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীসংখ্যাও বেড়েছে। রেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি দিন গড়ে হাজার তিরিশ যাত্রী ক্যানিং দিয়ে যাতায়াত করেন। প্রতি দিন প্রায় ৩ লক্ষ টাকার টিকিট শুধুমাত্র ক্যানিং স্টেশন থেকেই বিক্রি হয়।
কিন্তু অভিযোগ, এই লাইনে যাত্রী পরিষেবা নেই বললেই চলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ক্যানিং লাইনকে ডবল লাইন করেন। এ ছাড়া, কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয় ক্যানিং-ভাঙনখালি লাইন সম্প্রসারণের জন্য। এ জন্য মাতলা নদীর উপরে রেল সেতু নির্মাণের জন্য পিলার তৈরি হয়। তার কাজ অবশ্য এখনও অসমাপ্ত।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ক্যানিং স্টেশনে চারটি টিকিট কাউন্টার সব সময়ে খোলা থাকে না। লম্বা লাইন থাকায় টিকিট কাটতে গিয়ে ট্রেন ছেড়ে যায়। ফলে অনেকে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য টিকিট না কেটেই ট্রেনে উঠে পড়েন। তা ছাড়া, ট্রেনের ভেন্ডার কামরায় দৈনিক ৬০ কেজি করে পণ্য পরিবহণের জন্য মাসিক ৪০৫ টাকার টিকিট কাটতে হয়। অভিযোগ, অনেকেই ৬০ কেজির বেশি পণ্য তোলেন পুলিশের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে। এ সবের ফলে রেলের আয় কমে।
ক্যানিংয়ের মাছ ব্যবসায়ী হরিদাস মণ্ডল প্রতিদিন ক্যানিং থেকে মাছ কিনে তালদিতে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ৬০ কেজি করে পণ্য বহন করতে পারি। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাতায়াত করেন। রেল পুলিশ ঝামেলা করলে কিছু টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যান।’’ ব্যবসায়ীরা আরও জানান, নিয়মিত টিকিট চেকিংয়ের কড়া ব্যবস্থা থাকলে বেশি টাকা আয় করতে পারত রেল। কিন্তু কর্মী সংকোচনের ফলে চেকিং ব্যবস্থা প্রায় উঠেই গিয়েছে। তাই বিনা টিকিটে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
নিত্যযাত্রী ও রেলের কিছু কর্মীর বক্তব্য, ‘‘শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনে রেলের বহু জমি দখল হয়ে আছে। সেই সব জমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে ভাড়া বা লিজের মাধ্যমে রেল আয় করতে পারে। তেমনই স্টেশনের পাশের জমিতে সাইকেল, মোটর বাইক গ্যারেজ করে কাউকে টেন্ডার দিলে রেলের আয় বাড়বে। প্ল্যাটফর্মগুলিতে পরিকল্পনামাফিক দোকান তৈরি করে হকারদের দিলে তার থেকেও রেলের আয় হতে পারে।’’
নিত্যযাত্রী অনিমা মণ্ডল, শুক্লা বিশ্বাসরা বলেন, ‘‘ট্রেন লাইন উঠে গেলে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। চাকরি সূত্রে প্রতি দিন ক্যানিং আসতে হয়। যাত্রী পরিষেবা বাড়িয়ে এবং বিনা টিকিটে যাতায়াত বন্ধ করতে পারলে রেলের আয় বাড়তে পারে। সে সব না করে রেললাইন তুলে দিলে সাধারণ মানুষকে হয়রান হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy