Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে আসতে চায় না মেয়েরা

পানীয় জল নেই। শৌচাগারের পরিকাঠামো বেহাল। ফলে স্কুলে যেতে চাইছে না পড়ুয়ারা। শুধু পড়ুয়া নয়, ক্যানিঙের রায়বাঘিনি হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও স্কুলে এসে সমস্যায় পড়ছেন।

সাইকেল রাখার ছাউনিটুকু নেই। নেই ক্লাসঘরের জানলা-দরজার কপাট। নিজস্ব চিত্র।

সাইকেল রাখার ছাউনিটুকু নেই। নেই ক্লাসঘরের জানলা-দরজার কপাট। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

পানীয় জল নেই। শৌচাগারের পরিকাঠামো বেহাল। ফলে স্কুলে যেতে চাইছে না পড়ুয়ারা। শুধু পড়ুয়া নয়, ক্যানিঙের রায়বাঘিনি হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও স্কুলে এসে সমস্যায় পড়ছেন।

মূলত স্কুলছুট বাচ্চা ও এলাকার গরিব ছেলেমেয়েদের কথা মাথায় রেখে ১৯৪৯ সালে ক্যানিঙ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে রায়বাঘিনিতে তৈরি হয়েছিল হাইস্কুল। কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই স্কুলটি তৈরি হয়েছিল বলে জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। আর যতটুকু ছিল, তা-ও সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। তিনতলা ভবনের রং উঠে গিয়েছে। প্লাস্টার খসে পড়ছে। বারান্দায় গ্রিল নেই। খোলা বারান্দায় যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ক্লাসরুমগুলিতে কোনও জানলার পাল্লা নেই।

স্কুলে পড়ুয়া প্রায় ২৭০০। প্রয়োজনের তুলনায় বেঞ্চ কম। গাদাগাদি করে ক্লাসে বসতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। পানীয় জলের জন্য রয়েছে একটি মাত্র নলকূপ। ট্যাপ কল নেই। শৌচালয়গুলিতে জলের ব্যবস্থা নেই। এতই নোংরা যে ছেলেমেয়েরা যেতে চায় না। সম্প্রতি স্কুলে মিড ডে মিল খাওয়ার জন্য একটি কিচেন শেড তৈরি করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে আবার জলের ব্যবস্থা নেই। জল নিকাশিরও কোনও ব্যবস্থা নেই।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিন্টু প্রামাণিক বলেন, ‘‘স্কুলের পানীয় জল, শৌচালয় থেকে শুরু করে অনেক সমস্যা রয়েছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এলাকার সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল স্কুলে পানীয় জলের জন্য তার এমপি তহবিলের টাকা থেকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে পাইপ লাইনের কিছু কাজ হওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত ক্লাসরুমের জন্য সরকারও টাকা দিয়েছে স্কুলে। সেই টাকাও পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সরকার মনোনীত স্কুল পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন স্থানীয় দুই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক দেবব্রত মণ্ডল ও মুজিবর মোল্লা। দেবব্রতবাবু পরিচালন সমিতির সভাপতি, মুজিবর সদস্য। দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য আছে বলে স্কুল সূত্রের খবর। স্কুলের টাকা কার নেতৃত্বে খরচ হবে, তা নিয়েই বিবাদ। সে কারণে থমকে যাচ্ছে স্কুলের উন্নয়নের কাজ। মানুষের আরও অভিযোগ, ওই দুই শিক্ষক ঠিকমতো নিজেদের স্কুলেও যান না। এই স্কুলে পড়ে থেকে অশান্তি বাধায়।

স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘মেয়েদের নানা রকম সমস্যা থাকে। কিন্তু স্কুলে মহিলাদের জন্য যে শৌচালয় রয়েছে, তা ব্যবহারের অযোগ্য। তার উপরে শৌচালয়ে কোনও জলের ব্যবস্থা নেই। ঋতুকালীন সময়ে মেয়েরা স্কুলে আসতে ভয় পায়। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন।’’

অভিযোগ শুনে সম্প্রতি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাস। তিনি স্কুলের সব কিছু ঘুরে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভাপতিকে স্কুলের এক শিক্ষিকা নানা সমস্যার কথা জানান। পরেশরামবাবু পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারকে স্কুলে ডেকে দ্রুত পানীয় জলের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য আলাদা শৌচালয়েরও নির্দেশ দেন। সকলকে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন তিনি।

দেবব্রতবাবুর কথায়, ‘‘স্কুলে নতুন কমিটির দায়িত্বে এসেছি। কিছু সমস্যা আছে ঠিকই। তবে আমরা চেষ্টা করছি সেগুলি সমাধান করার। তবে তিনি বিরোধের বিষয়টি এড়িয়ে যান।’’ অন্য দিকে, মুজিবর রহমানের বক্তব্য, ‘‘আমি সমিতির একজন সদস্য মাত্র। স্কুলের ফান্ড খরচের ক্ষেত্রে আমার কোনও এক্তিয়ার নেই। তবে এটা ঠিক, স্কুলে কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলির সমাধান করা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poor infrastructure Toilet School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE