Advertisement
০৮ মে ২০২৪
haroa

‘বোমা যারা বাঁধে, তাদের শাস্তি দিতে চাই’

বুধবার বোমা ফেটে মিনাখাঁর বাসিন্দা, বছর আটেকের সোহানা খাতুনের মৃত্যুর খবর জেনেছে পৌলমী। জেনেছে, বোমা ফেটে আরও দুই শিশু জখম হয়েছে। ফের আতঙ্ক চেপে বসেছে তাকে।

নিজের বাড়িতে পৌলমী।  নিজস্ব চিত্র

নিজের বাড়িতে পৌলমী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাড়োয়া শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৩৪
Share: Save:

এখনও মাঝে মধ্যে ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে ওঠে মেয়েটা। বলে, ‘আমার হাত কোথায় গেল!’’ ধড়ফড় করে উঠে বসে বিছানায়।

২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগের এক সকাল পৌলমী হালদারের জীবনটাই বদলে দিয়ে গিয়েছে। ফুল কুড়োতে গিয়ে সে দিন মেয়েটা তুলে এনেছিল বোমা। খেলতে খেলতে সেই বোমা ফেটেই পৌলমীর বাঁ হাত উড়ে যায়।

বুধবার বোমা ফেটে মিনাখাঁর বাসিন্দা, বছর আটেকের সোহানা খাতুনের মৃত্যুর খবর জেনেছে পৌলমী। জেনেছে, বোমা ফেটে আরও দুই শিশু জখম হয়েছে। ফের আতঙ্ক চেপে বসেছে তাকে। মা জানালেন, খবরটা শোনা পরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।

উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার গোপালপুরে বাড়ি পৌলমীদের। এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে সে। মায়ের কাছে তার প্রশ্ন, ‘‘এমন কেন হয় বলতে পারো? বোমায় কারও হাত-পা-মাথা উড়ে যায়। বোমা না বাঁধলেই তো হয়! পুলিশ ওদের শাস্তি দেয় না কেন?’’

ছলছল চোখে সে কথার উত্তর দিতে পারেননি মা দীপালি।

বোমা ফেটে ছোট্ট পৌলমীর হাত উড়ে যাওয়ার ঘটনায় সে সময়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। পৌলমীর বাবা শম্ভু ও মা দীপালি ভেঙে পড়েছিলেন। দক্ষিণ গোপালপুর প্রাথমিক স্কুলে সে সময়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত পৌলমী। কলকাতার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে করে শরীর থেকে বাঁ হাত বাদ দিতে হয়েছিল পৌলমীর। কয়েকটা দিন কাটে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে। কয়েক মাস পরে বাড়ি ফেরে। তাকে দেখতে গোপালপুরে আসেন ত্রিপুরার তৎকালীন রাজ্যপাল তথাগত রায়। এসেছিলেন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস। পরে মন্ত্রী সাধন পান্ডের ডাকে কলকাতায় যায় পৌলমী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় পৌলমীর জন্য বিদেশ থেকে আসে নকল হাত।

সেই হাত জোড়া দেওয়ার পরে নিজের দৈনন্দিন কাজকর্ম সবই করতে পারে এখন। তবে অনেক সময়ে নকল হাত পরে না। পৌলমীর কথায়, ‘‘সারা জীবন কি আর নকল হাত নিয়ে চলবে? তাই নকল হাত ছাড়াই কাজকর্ম করার চেষ্টা ছাড়িনি। বড় হচ্ছি। শুনেছি, পরে আকারে বড় হাত লাগানোর কথা। একবার না হয় সাহায্য এসেছে। পরেরবার আসবে কি না, তা তো জানি না!’’

অসুস্থ স্বামী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার দীপালির। পরিবারে একমাত্র রোজগেরে তিনিই। ব্লাউজ সেলাই করে সংসার চলে। তিনি বলেন, ‘‘কোথা থেকে একটা ঝড় এসে আমাদের সংসারটা এলোমেলো করে দিয়ে গেল!’’

পৌলমী বলে, ‘‘বড় হয়ে পুলিশ হতে চাই। বোমা যারা বাঁধে, তাদের শাস্তি দিতে চাই। না হলে শিক্ষকও হতে পারি। শেখাব, কেউ যেন কোনও অপরাধ না করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

haroa Bomb Explosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE