Advertisement
০৭ মে ২০২৪

School Dropout: করোনাকালে বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা, ক্লাসে ফেরানো যাবে? চিন্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ

পরিকল্পনা এবং বেশ কিছু পদক্ষেপও শুরু করেছে স্কুলগুলি। এরপরেও সকলকে ফেরানো যাবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

প্রস্তুতি: স্কুল খোলার আগে ভবন রং করা হচ্ছে। হাবড়ার একটি বিদ্যালয়ে।

প্রস্তুতি: স্কুল খোলার আগে ভবন রং করা হচ্ছে। হাবড়ার একটি বিদ্যালয়ে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫৭
Share: Save:

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ১৬ নভেম্বর স্কুল খুলবে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকটাই বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। শিক্ষকেরা মনে করছেন, অতিমারি পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা অনেকেই কাজকর্ম হারিয়েছেন। তার প্রভাব পড়েছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায়। আর্থিক অনটনের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে কাজকর্মে যুক্ত হয়েছে অনেক পড়ুয়া। এমনকী, অর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাও অনেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এই পড়ুয়াদের ফের স্কুলে ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্চ বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই বিষয়ে পরিকল্পনা এবং বেশ কিছু পদক্ষেপও শুরু করেছে স্কুলগুলি। এরপরেও সকলকে ফেরানো যাবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিজ্ঞতা, স্কুলে এলে পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা, খেলাধুলোর মাধ্যমে পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশ ঘটে। এখন বাড়িতে একা থাকতে থাকতে ছেলেমেয়েরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পড়াশোনা করতে চাইছে না।

বনগাঁ মহকুমার বাগদার কোনিয়াড়া যাদবচন্দ্র হাইস্কুলের অনেক পড়ুয়াই পড়া ছেড়ে কাজে যুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে। অনেকে কাজের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, সম্প্রতি অভিভাবকদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি কিছু পড়ুয়া এলাকায় কাজ করছে। কেউ কেউ বাইরের রাজ্যে চলে গিয়েছে। আমরা তাদের বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এক ছাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। তার দাদা একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। দু’জনেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজ করছে। তাদের বাড়িতে গিয়ে ওদের মাকে বলেছি, পড়াশোনার সব দায়িত্ব আমাদের। ওদের স্কুলে পাঠান।’’

গাইঘাটা ইছাপুর হাইস্কুলের চিত্রটাও অনেকটাই এক। এই স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্র বাইক সারানোর গ্যারেজে কাজ নিয়েছে। প্রধান শিক্ষক অশোক পাল বলেন, ‘‘গ্যারেজে কাজ করা ছেলেটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে পড়াশোনায় যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছি। ছেলেটি কথা দিয়েছে স্কুলে আসবে।’’

অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের ২ জন ছাত্র এখনও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করেনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই পড়ুয়ারা কাজে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। ওদের অভিভাবকেরা ওদের আর স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না। তারা আর পড়াশোনা করবে না বলে জানিয়েছে। প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘নবম শ্রেণির ১২১ জন পড়ুয়ার মধ্যে প্রথমে ২৭ জন পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন করতে চায়নি। আমরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। কিন্তু ওই ২ জন ছাত্রকে এখনও রাজি করানো যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’’

অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ পড়ুয়াদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় গিয়ে পড়াচ্ছেন। তবুও তার দুই ছাত্র সেলাই কারখানায় যোগ দেয়। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য মনোজবাবু তাদের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি ওই পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। পরিবারের পাঁচ মাসের খাদ্যসামগ্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। আর্থিকভাবেও সাহায্য করছেন। মনোজবাবু বলেন, ‘‘আমার স্কুলে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা কম। চেষ্টা করছি একটি পড়ুয়াও যেন পড়াশোনা না ছেড়ে দেয়।’’

গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবিথী স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা কিছুদিন আগে পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করেছিলেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। স্কুল খোলার আগে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম অভিভাবকদের স্কুলে ডেকেছিলেন। সেখানে ৪০ শতাংশ অভিভাবক গরহাজির ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। রবিউল বলেন, ‘‘বৈঠক আসা অভিভাবকদের বলা হয়েছে, যাঁরা আসেননি তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর করে তাঁদের বোঝানোর। স্কুল খোলার পর যারা অনুপস্থিত থাকবে, তাঁদের বাড়িতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাবেন। আমরা সবরকম ভাবে তাদের পাশে দাঁড়াব।’’

বনগাঁ মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘স্কুল খোলার পর বোঝা যাবে কারা স্কুলছুট হয়েছে। সেই মতো তাদের ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ
করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE