Advertisement
০২ মে ২০২৪

ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্মে দাপাচ্ছে হকারেরা

সকাল ৮টা ৫৬ মিনিট। ডাউন বারাসত-বনগাঁ লোকাল পৌঁছল হাবরা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। এক প্রৌঢ়া টিকিট কেটে ট্রেন ধরবেন বলে দ্রুত এগোনোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভিড় ঠেলে পৌঁছতে পারলেন না ট্রেনের কামরা অব্দি। চোখের সামনে বেরিয়ে গেল ট্রেন।

হকারদের গুমটি এড়িয়ে প্রতি দিন চলে এমন হুড়োহুড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হকারদের গুমটি এড়িয়ে প্রতি দিন চলে এমন হুড়োহুড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০০:২৩
Share: Save:

সকাল ৮টা ৫৬ মিনিট। ডাউন বারাসত-বনগাঁ লোকাল পৌঁছল হাবরা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। এক প্রৌঢ়া টিকিট কেটে ট্রেন ধরবেন বলে দ্রুত এগোনোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভিড় ঠেলে পৌঁছতে পারলেন না ট্রেনের কামরা অব্দি। চোখের সামনে বেরিয়ে গেল ট্রেন।

শেষ মুহূর্তে অবশ্য লাফ দিয়ে কামরায় উঠে পড়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু তিনি ভিড়ের মধ্যে যে ভাবে দৌড়লেন, মাঠের পরিভাষায় তা তো রীতিমতো ‘ডজ’ করা! সে কি আর ওই প্রৌঢ়ার পক্ষে সম্ভব?

ট্রেন মিস করে হাঁপাতে হাঁপাতে প্রৌঢ়া বললেন, ‘‘গোটা প্ল্যাটফর্ম জুড়ে গাদা গাদা দোকানপাট। হাঁটব-চলব কী করে!’’

বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার ব্যস্ত রেল স্টেশন হাবরা। তিনটি প্ল্যাটফর্ম। তিনটিতেই জাঁকিয়ে বসে হকারেরা তাদের দাপটও নেহাত কম নয়, জানালেন নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ভিড়ের মধ্যে দাঁড়াতে গেলে যদি দোকানের মালপত্রে সামান্য গা ঠেকে যায়, ওমনি ভারী গলায় শোনা যায় হুঁশিয়ারি। বসার জায়গাগুলোও সব দখল হয়ে গিয়েছে। ট্রেনে ওঠানামার সময় বিপদের ঝুঁকি থাকে সব সময়। হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলিতে ধাক্কা খেয়ে কেউ কনা কেউ পড়ে আকছার। সব থেকে খারাপ অবস্থা ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মেরই।

কয়েক বছর আগে হাবরাকে ‘মডেল স্টেশন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তাতে পরিকাঠামো বেড়েছে অবশ্যই। কিন্তু হকার সমস্যা থেকে গিয়েছে সেই তিমিরেই।

১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার জন্য প্ল্যাটফর্মে রয়েছে বেশ কিছু কংক্রিটের বেঞ্চ। কিন্তু সেগুলি ঘিরেই গজিয়ে উঠেছে দোকানপাট। কেউ ফাঁক গলে সিটে বসলেও ঘাড়ের কাছে হাঁকডাক চলে হকারদের। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম জুড়ে রয়েছে কয়েকশো দোকানপাট। সেগুলি এমন ভাবে গজিয়ে উঠেছে, টপকে ট্রেন ধরতে যাওয়াটা সমস্যার। বহু দোকান আবার বন্ধ পড়ে।

নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, তাঁরা চান না হকারেরা কর্মহীন হয়ে পড়ুন। সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করুক রেল। কিন্তু স্টেশনে যাত্রীদের যেন স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ে।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হকার বসানো নিয়ে মদত রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির। রেল কর্তৃপক্ষও যে কারণে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ এড়িয়ে যায়। যখন সে রাজনৈতিক দল রাজ্যে ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের ছত্রচ্ছায়ায় চলে যান হকারেরা।

অতীতে এখানে সিটুর দাপট ছিল। এখন তৃণমূলের। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘হকারদের সঙ্গে কথা বলব। তারপরে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। রেল যদি কোনও জায়গা দেয়, সেখানে হকারর্স মার্কেট করে পুনর্বাসন দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করা চলবে না।’’

স্থানীয় বাসিন্দা তথা কংগ্রেস নেতা বিশ্বজিৎ সমাদ্দার অবশ্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে, যে কোনও দিন বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ট্রেনে ওঠা-নামার সময়ে। আমরা চাই, দ্রুত পুনর্বাসন দিয়ে হকারদের সরানো হোক।’’

কী বলছে আরপিএফ?

হকার উচ্ছেদ করতে গেলে কিছু সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় বলে তাদের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে দিকটি যাদের নজরে রাখার কথা, সেই সব দফতরের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা মেলে না বলে এরপিএফের এক আধিকারিকের দাবি।

এ ক্ষেত্রে অভিযোগের তির জিআরপি এবং রাজ্য পুলিশের দিকে। জিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে, হকার উচ্ছেদের আগে প্রশাসনিক স্তরে সব পক্ষকে নিয়ে একটি সমন্বয় বৈঠক করা উচিত। কিন্তু রেলের পক্ষ থেকে তা করা হয় না। ফলে হঠাৎ করে পুলিশ চাইলে পাঠানো সম্ভব হয় না।’’

দিন কয়েক আগে রেলের শিয়ালদহের ডিআরএম বাসুদেব পাণ্ডা হাবরা-সহ বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়ে ন্যূনতম এক মিটার দূরে যাত্রীদের থাকা উচিত। কিন্তু হকারদের কারণে তা সম্ভব হয় না। ফলে যাত্রীদের বিপদের ঝুঁকি থাকে।’’ হকার সমস্যা মেটানোর জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

তা কবে হবে এবং কী উপায়ে, তা জানতে আগ্রহী নিত্যযাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hawker rail hawker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE