Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Pandal Workers

শিল্পকর্মে ধর্মের ভেদাভেদ মানেন না রাজু

প্রায় ১৪ বছর আগে রাজুর শিল্পকলা নজরে এসেছিল হাবড়ার বাণীপুরের বাসিন্দা প্রতিমা শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের। ইন্দ্রই তাঁকে বিভিন্ন ধরনের নকশার কাজে অনুপ্রেরণা জোগান।

পুজোর কাজ করছেন রাজু ।

পুজোর কাজ করছেন রাজু । —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১৭
Share: Save:

বিভিন্ন ধরনের জিনিসের উপরে নকশা তৈরি করা তাঁর ছোটবেলার নেশা। পড়াশোনায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোননি। কিন্তু হাবড়ার বামিহাটির বাসিন্দা রাজু মণ্ডলের মণ্ডপসজ্জার এলাকায় যথেষ্ট নামডাক আছে। তাঁর বাবা আকাজ মণ্ডল ও দাদু ইউনুস মণ্ডলও এই শিল্পকলায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের কাছেই এই কাজের হাতে খড়ি হয় রাজুর।

প্রায় ১৪ বছর আগে রাজুর শিল্পকলা নজরে এসেছিল হাবড়ার বাণীপুরের বাসিন্দা প্রতিমা শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের। ইন্দ্রই তাঁকে বিভিন্ন ধরনের নকশার কাজে অনুপ্রেরণা জোগান। কখনও ইন্দ্রজিতের কারখানায়, আবার কখনও পুজো মণ্ডপে বসে নানা সামগ্রীর উপরে হাতুড়ি, ছেনি, করাত দিয়ে নকশা তৈরি করেন মুসলিম পরিবারের ছেলে রাজু। ইন্দ্রজিতের ছত্রচ্ছায়ায় রাজু দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর মণ্ডপসজ্জার কাজ করে আসছেন। ইন্দ্রজিৎ নিজেও দক্ষ কারিগর। অল্পবয়সি কয়েক জনকে হাতের কাজ শিখিয়েছেন। রাজু তাঁদের মধ্যে এক জন।

স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে রাজুর সংসার। তাঁরাও বাড়িতে বাঁশ-কাঠের বিভিন্ন ধরনের নকশা করা জিনিস তৈরি করেন। এ বার সোদপুরের একটি পুজো মণ্ডপের জন্য প্লাস্টিকের সমস্ত জিনিস দিয়ে নকশা তৈরি করেছেন।

অন্য একটি মণ্ডপের জন্যও কিছু মডেল তৈরি করছেন। বছর ছেচল্লিশের রাজুর কথায়, “চার মাস পুজো মণ্ডপের কাজ করি। বছরের বাকি সময়ে বিভিন্ন মেলায় হাতের কাজের দোকান সাজিয়ে নিয়ে বসি।”

নিজের মোটরসাইকেলও সাজিয়েছেন অন্য ভাবে। ভাঙাচোরা একটি বাইক আড়াই হাজার টাকায় কেনেন। হেডলাইট নেই, দশ টাকার লাইট লাগিয়ে রেখেছেন রাতে চলার জন্য। বরাবরই শখ ছিল, বাইকে সিসি ক্যামেরা লাগাবেন। টাকার অভাবে তা হয়ে উঠছে না দেখে অচল একটি সিসি ক্যামেরাই বাইকের সামনে লাগিয়ে রেখেছেন। রাজুর শিল্পকলায় মুগ্ধ তাঁর সহকর্মীরা বাইকের পিছনে একটি কার্ডবোর্ডে লিখে দিয়েছেন, ‘একটা গল্প’। বাস্তবে সেই গল্পেরইনায়ক রাজু।

তবে রাজু সব থেকে বেশি আনন্দ পান, যখন তাঁর তৈরি মণ্ডপ কয়েক হাজার মানুষের প্রশংসা পায়। রাজুর বলেন, “শিল্পী হিসেবে এটাই সব থেকে বড় পাওয়া। ধর্ম মানুষের মনে থাকে। এক জন শিল্পীর শিল্প প্রকাশ পায় তাঁর কাজে। সেখানে কোনও ধর্মের ভেদাভেদ থাকে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE