Advertisement
০১ মে ২০২৪

বিয়ে রুখলেন স্কুলের দিদিমনি

তেরো বছরের ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলে ফিরিয়ে আনলেন এক শিক্ষিকা। 

দীপা নাথ

দীপা নাথ

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৯
Share: Save:

তেরো বছরের ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলে ফিরিয়ে আনলেন এক শিক্ষিকা।

সরস্বতী পুজো উপলক্ষে সোমবার পড়ুয়াদের খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল বাগদার কাশীপুর গ্রামসভা হাইস্কুলে। দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে এসেছিল। তখনই ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীর কাছ থেকে খরবটা কানে পৌঁছয় শিক্ষিকা দীপা নাথের। দুই ছাত্রী তাঁকে জানায়, তাদের ক্লাসের এক ছাত্রীর এ দিনই বিয়ে। রবিবার তাকে বাড়ির লোকজন অন্যত্র নিয়ে গিয়েছেন।

ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার বিয়ের খবর পেয়ে আঁতকে ওঠেন দীপা। তিনি বিষয়টি জানান বাগদা থানার পুলিশকে। এরপরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই শিক্ষিকা পৌঁছে যান মেয়েটির বাড়িতে। দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়ের। সেখান থেকে যে ঠিকানা পায় পুলিশ, সেখানে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ মেলেনি।

দীপা মেয়েটির মামার ফোন নম্বর জোগাড় করেন একে তাকে ধরে। সেখানে ফোন করে দীপা জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলে পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।

দিদিমণির ফোন পেয়ে দমে যায় পাত্রীপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে দীপা ফের মেয়েটির বাড়িতে যান। তাকে দেখে কিশোরী মেয়েটি জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। বলে, সে বিয়ে করতে চায় না।

দিদিমণি তাকে সাহস দেন। এ দিকে, মেয়ের দিদিমা জানান, নাতনির লেখাপড়া, জামা-কাপড়ের খরচ তাঁরা বহন করতে পারছেন না। দীপা বলেন, সে সবের দায়িত্ব তাঁর। মেয়েটাকে শুধু পড়তে দিন।

তাতে কাজ হয়। বিয়ে বাতিল করতে রাজি হয় পরিবার। স্কুলের শিক্ষক সফিরউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা মেয়েটির দাদু-দিদাকে বোঝানোর পরে ওঁরা বিষয়টা মেনে নিয়েছেন। নাতনির বয়স আঠারো না হলে বিয়ে দেবেন না বলে কথা দিয়েছেন।’’

পুলিশ ও স্থানীয় জানা গিয়েছে, মেয়েটির বাবা-মা অনেক দিন আগে মারা গিয়েছেন। সে দাদু-দিদিমার কাছে থাকে। দাদু পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। নাতনিকে লেখাপড়া করানোর মতো সামর্থ্য নেই। তাই বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

মঙ্গলবার মেয়েটিকে নিয়ে দীপা ও সফিরউদ্দিন বাগদা থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করেছেন। ওসি অসীম পাল মেয়েটিকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেছেন, কোনও অসুবিধা হলে সে যেন সরাসরি ফোন করে।

দিদিমণির কাজে গর্বিত শিক্ষকেরাও। বিনয় বিশ্বাস নামে দীপার এক সহকর্মী বলেন, ‘‘ওঁর ভূমিকা সত্যি প্রশংসনীয়।’’

এ দিন স্কুলে গিয়ে ফের ক্লাস করতে শুরু করেছে মেয়েটি। চোখে মুখে ফিরে এসেছে হাসি। সে বলে, ‘‘আমি লেখাপড়া করে বড় হতে চাই।’’

এটুকু চাওয়া এখন তার জন্য চাইছে গোটা স্কুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage School Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE