Advertisement
E-Paper

পাঁচ কোটির কেলেঙ্কারি, গ্রেফতার ৭

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালের জুলাই মাসে ওই  সমিতি তৈরি হয়। অফিস ঘর হয় জয়ন্তীপুর বাজার এলাকায়। চড়া সুদের লোভে অনেকে টাকা রাখতে শুরু করেন। চড়া সুদে ঋণও দিত ওই সমিতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৭
প্রতারণার অভিযোগে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

প্রতারণার অভিযোগে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

চড়া সুদের টোপ দিয়ে বেআইনি ভাবে বাজার থেকে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে ‘বনগাঁ-পেট্রাপোল সীমান্ত উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। সুদের টাকা তো দূরের কথা, অনেকে আসল টাকাই ফেরত পাননি সেখানে টাকা রেখে। প্রতারণা ও আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সমিতির সভাপতি-সহ ৭ সদস্যকে। ধৃতেরা আপাতত পুলিশ হেফাজতে। অফিসটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালের জুলাই মাসে ওই সমিতি তৈরি হয়। অফিস ঘর হয় জয়ন্তীপুর বাজার এলাকায়। চড়া সুদের লোভে অনেকে টাকা রাখতে শুরু করেন। চড়া সুদে ঋণও দিত ওই সমিতি। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ওই সমিতির সদস্যেরা মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছে। ওই কাজের জন্য সরকারি কোনও নথিপত্র তাদের নেই।’’

পেট্রাপোলের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দীপক ঘোষ ওই সমিতিতে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। তিনি জানান, ‘‘আমার শ্যালকের ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ওই সমিতিতে রেখেছিলাম। ৫ বছর পরে দ্বিগুণ পাওয়ার চুক্তি ছিল। স্থানীয় পেট্রাপোল-পিরোজপুর মহোৎসব কমিটির ৩ লক্ষ টাকাও ওখানে রাখা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত পাইনি।’’

খেদাপাড়ার চাষি মধুসূদন বিশ্বাস নিজের নামে ৫ লক্ষ এবং মেয়ের নামে ১ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল, ১ লক্ষ টাকা পিছু মাসে ১৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে মধুসূদনবাবুকে। সেই মতো ৬ লক্ষ টাকার জন্য কয়েক মাস ধরে তিনি ৯ হাজার টাকা করে পেয়েওছিলেন। কিন্তু পরবর্তী প্রায় ৪ বছর ধরে মধুসূদনবাবু কোনও টাকাই পাননি বলে অভিযোগ। বললেন, ‘‘জমি বিক্রি করে টাকা জমিয়েছিলাম। সমিতির লোকজন এসে লোভ দেখিয়েছিল। লোভ করতে গিয়েই সর্বস্বান্ত হলাম।’’

শুধু মধুসূদনবাবু নন, ওই সমিতিতে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। দিন কয়েক আগে চিত্ত সর্দার নামে এক ব্যক্তি ওই সমিতির সদস্যদের নামে পেট্রাপোল থানায় আর্থিক তছরুপ ও জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করছেন। সমিতির সভাপতি সুকুমার রায় গ্রেফতার হয়েছেন। ধরা পড়েছেন সমিতির সদস্য অসিত রায়, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, অসীম বিশ্বাস, সুজয় মণ্ডল, সুকুমার মণ্ডল ও উজ্জ্বল সরকার। সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। বাকিদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। প্রায় ৫ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান তদন্তকারী অফিসারদের।

অভিযোগ, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সমিতির সদস্যেরা বাড়িতে গিয়ে শাসিয়ে আসত। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিটির বাড়ি থেকে জিনিসপত্রও উঠিয়ে নিয়ে আসত বলে অভিযোগ।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, সমিতির সদস্যেরা সাধারণ মানুষের টাকায় নামে-বেনামে প্রচুর গয়নাগাটি, সম্পত্তি, জমি, ভেড়ি ইত্যাদি কেনে।

‘বনগাঁ–পেট্রাপোল সীমান্ত উন্নয়ন চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও খুলেছিল। তবে সম্পত্তি ও স্কুল বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। প্রতিশ্রুতি ছিল, ওই টাকা দিয়েই গ্রাহকদের টাকা মেটানো হবে। তা-ও হয়নি।

মহকুমার বিভিন্ন গ্রাম ও শহর এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ওই রকম সমিতি। পাড়ার কিছু যুবক মিলে খুলে বসছে এক একটি সমিতি। সমিতির সদস্যেরা নিজেরা মিলে অর্থ দিয়ে একটি তহবিল তৈরি করছে। তার পর থেকে চড়া সুদে মানুষকে ঋণ দিচ্ছে।

স্টেট ব্যাঙ্কের বনগাঁ শাখার মুখ্য প্রবন্ধক প্রসীদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবির অনুমতি ছাড়া আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত এ ধরনের কাজকর্ম করা যায় না।’’ বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেআইনি সমিতি সম্পর্কে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সাধারণ মানুষও চাইলে গোপনে আমাদের খবর দিতে পারেন।’’

Bangaon arrest Forgery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy