Advertisement
০৪ মে ২০২৪
gosaba

Tigers: বাঘের পেটে গিয়েছে স্বামী, তবুও বাঘ বাঁচাতে পথে ওঁরা

সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলার মুখে পড়ে প্রাণ গিয়েছে এই সব মহিলাদের স্বামীদের।

সাহসিনী: বাঘ বাঁচানোর বার্তা দিচ্ছেন ওঁরাও।

সাহসিনী: বাঘ বাঁচানোর বার্তা দিচ্ছেন ওঁরাও। নিজস্ব চিত্র।

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২২ ০৬:৩৫
Share: Save:

কারও স্বামীকে বাঘে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারপর থেকে বছরের পর বছর কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি। কারও স্বামী বাঘের হামলায় মারা গিয়েছেন।

যার আক্রমণে পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল ওঁদের, সেই বাঘের জীবন বাঁচানোর দাবি নিয়েই পথে নামলেন সীতারানি, বিমলা, চন্দনা, অঞ্জলিরা। শুক্রবার গোসাবার পাখিরালয়ে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসে বাঘেদের বাঁচানোর দাবি নিয়ে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমে মানুষকে সচেতন করেন এই মহিলারা।

সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলার মুখে পড়ে প্রাণ গিয়েছে এই সব মহিলাদের স্বামীদের। স্বামীর মৃত্যুর পরে অনেকেই সংসার বাঁচানোর জন্য সেই জঙ্গলের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাঁদের নানা ভাবে বুঝিয়ে, বিকল্প পেশার হদিস দিয়ে, আর্থিক সাহায্য করে— জঙ্গলের পথ থেকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন সুন্দরবনের শিক্ষারত্ন প্রাপক শিক্ষক অমল নায়েক। গত বেশ কিছু বছর ধরে এই ‘বাঘ বিধবাদের’ স্বনির্ভর করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। হাঁস, মুরগি পালন থেকে শুরু করে, মৌমাছি পালন, নানা ধরনের হাতের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবারের শিশুদের জন্য বই, খাতার ব্যবস্থা করা, স্কুলে ভর্তি করানো— সবই করেছেন অমল।

সেই সঙ্গে জঙ্গলে বাঘ বাঁচানো কেন দরকার, তা নিয়েও স্থানীয় মানুষকে পাঠ দেন অমল। সেই পাঠের সুফলও মিলেছে। স্বামীর মৃত্যুর কারণ ছিল যে বাঘ, সেই বাঘকে বাঁচানোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মহিলারা অন্য মানুষকে বার্তা দিলেন।

অঞ্জলি, কৌশল্যারা জানান, স্বামীকে হারিয়ে একেবারে পথে বসার অবস্থা হয়েছিল। ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। জঙ্গলের পথই ধরেছিলেন ফের। কিন্তু অমল স্যার সকলকে বিকল্প পেশার পথ দেখিয়েছেন। অঞ্জলি বলেন, ‘‘জঙ্গলে গিয়ে স্বামীর মতো আমিও বাঘের পেটে গেলে সন্তানদের কী হবে— সেই ভেবে আর কোনও দিন যাইনি।”

অমল বলেন, “বাঘেদের প্রতি এঁদের এক সময়ে মনে যথেষ্ট ঘৃণা ছিল। কিন্তু বাঘ না বাঁচলে জঙ্গল বাঁচবে না। জঙ্গল না বাঁচলে আমরা বাঁচব না। এই সব বোঝানোর পাশাপাশি এঁদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করেছি। তাতে ধীরে হলেও কাজ কিছুটা হয়েছে। আর সে কারণেই ঝড়খালি, মথুরাখণ্ড-সহ সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন বাঘের কবলে পড়েননি।”

এদিন সুন্দরবনের গোসাবা দ্বীপের পাখিরালয়, দয়াপুর ও সোনাগাঁ গ্রামের প্রায় দু’শো বাঘের হানায় মৃত পরিবারের সদস্য যোগদান করেছিলেন বাঘ দিবসের অনুষ্ঠানে। এ প্রসঙ্গে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, ‘‘বাঘে মানুষে সঙ্ঘাত কমাতে বন দফতর, বিভিন্ন এনজিও দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। সাধারণ মানুষও এ কাজে এগিয়ে এলে সাফল্য আসবেই।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gosaba Tigers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE