স্কুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তনী রুন্ময় (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘অ-এ অজগর আসছে তেড়ে। আমটি আমি খাব পেড়ে।’’ মিষ্টি সুরের সঙ্গে ছড়ার শব্দগুলো বড় এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল খুদে পড়ুয়ারা।
বসিরহাটের ভবাণীপুর প্রাথমিক স্কুলে সোমবার এ ভাবেই শুরু হয়ে গেল ডিজিটাল শিক্ষার উদ্বোধন।
উদ্যোগ আর খরচাপাতি যাঁর, সেই রুন্ময় ভট্টাচার্য পেশায় ব্যবসায়ী। পড়তেন এই স্কুলই। এ দিন স্বভাবতই নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলেন বার বার। বললেন, ‘‘আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন একটা মাত্র ঘর। বর্ষার সময়ে টালির চালের ফুটো দিয়ে জল পড়ত। বড় হয়ে বুঝেছি, আধুনিক শিক্ষার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জামের কতটা প্রয়োজন। বেসরকারি স্কুলে এ সব সরঞ্জাম থাকায় সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে পৃথিবীকে দেখছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এই এলাকার ছেলেমেয়েদর আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষিত করার ইচ্ছে থেকেই কম্পিউটার-সহ নানা কিছু দেওয়ার কথা ভেবেছেন।
উদ্বোধনেও ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া। রুন্ময়বাবু ছোটবেলায় যে শিক্ষিকার কাছে পড়াশোনা করেছেন, সেই দীপা মণ্ডলকে দিয়ে ফিতে কেটে ডিজিটাল শিক্ষার সূচনা হয়েছে স্কুলে। ওই শিক্ষিকার জন্য প্রতি মাসে কিছু আর্থিক সাহায্যের কথাও ঘোষণা করেছেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্রটি। শ’তিনেক পড়ুয়ার হাতে শিক্ষার সরঞ্জাম তুলে দেওয়া হয়।
এই উদ্যোগ ছুঁয়ে গিয়েছে অনেককেই। তাঁদেরই মধ্যে বিপ্লব মণ্ডল নামে একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কাকলি রায় মণ্ডলের হাতে ৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
একটি মাত্র ঘর, ১ জন শিক্ষক এবং ৫-৬ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভবাণীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে সেখানে দোতলা ঝকঝকে স্কুল বাড়ি। ১০টি ঘর। ৩২০ জন ছাত্রছাত্রী। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১০ জন।
প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘এখানে পড়ুয়াদের অধিকাংশই অত্যন্ত গরিব ঘর থেকে আসে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ডিজিটাল শিক্ষার ব্যবস্থা হওয়ায় আমরা রোমাঞ্চিত। রুন্ময়বাবুকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।’’ স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষাকা লীলাবতী বসু বলেন, ‘‘একটা সময়ে ঘরে জল পড়ত। বাতাস উঠলে ঘর ছাড়তে হতো। ঘরের চালে সাপ ঘুরত। বিদ্যুৎ ছিল না। তখন আমরা স্কুলের উন্নয়নের জন্য অর্থ সংগ্রহে গ্রামে গ্রামে ঘুরতাম। আমার এক ছাত্র স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য যা করল, তাতে আমি গর্বিত।’’ অভিভাবক অঞ্জলি বিশ্বাসের স্বামী সোনার দোকানের কর্মী। মেয়ে সৌমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শিপ্রা পালের স্বামী ট্রাক চালক। মেয়ে শিল্পা পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। সকলেই গোটা ব্যবস্থায় অভিভূত। বসিরহাট পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শৈলেশ পাল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘রাজ্যে অন্য কোথাও প্রাথমিক এমন ডিজিটাল শিক্ষা চালু আছে কিনা আমার জানা নেই।’’
মফস্সলের স্কুলে ডিজিটাল পদ্ধতির এই শিক্ষা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নের গণ্ডীটাকে যেন অনেকটাই প্রসারিত করে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy