Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
অনুপস্থিত পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন শিক্ষকেরা

Schools: বিবাহিত ছাত্রীদেরও ফিরিয়ে আনতে পারল অনেক স্কুল

শিক্ষকেরা মনে করছেন, স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রীদের বিয়ে হলেও তা জানা যায়নি। অনলাইন ক্লাসে বেশিরভাগ ছাত্রী হাজির থাকত না।

nউদ্যোগ: পড়ুয়াদের ফেরাতে বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষিকারা।

nউদ্যোগ: পড়ুয়াদের ফেরাতে বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষিকারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৪৯
Share: Save:

প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় বহু পড়ুয়ারই পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক চুকে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বিয়েও হয়েছে কারও কারও। তাদের বেশিরভাগই স্কুলে ফিরতে আগ্রহী নয় বলে জানতে পারছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যও মিলেছে। কয়েক জন বিবাহিত ছাত্রী ফের ক্লাসে আসছে।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটার ইছাপুর হাইস্কুলের ১১ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিবাহিত তিন ছাত্রীকে স্কুলে ফেরানো গিয়েছে। তাদের এক জন দ্বাদশ শ্রেণির এবং দু’জন একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া।

বাকিদের কী হবে?

প্রধান শিক্ষক অশোক পাল বলেন, ‘‘আরও ৩ জন স্কুলে আসবে বলে জানিয়েছে। তবে বাকিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। কারণ, তারা এলাকার বাইরে চলে গিয়েছে। ঘরসংসার করছে।’’ তিনি আরও জানান, যাদের বিয়ে হয়েছে, তারা মূলত দরিদ্র পরিবারের। করোনা পরিস্থিতিতে রুজি-রোজগার কমে গিয়েছিল। ‘ভাল পাত্র’ পেয়ে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

বনগাঁর গাঁড়াপোতা গালর্স হাইস্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, স্কুলের তিন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করার সময়ে দেখা যায়, দুই ছাত্রী আসেনি। প্রধান শিক্ষিকা ববি মিত্র খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নবম শ্রেণির বিবাহিত দুই ছাত্রীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলে আনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এক ছাত্রী বিয়ের পরে মুর্শিদাবাদে থাকে। অন্য ছাত্রীটি পালিয়ে বিয়ে করেছে। পরিবারের লোকজনই তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না।’’ তবে একাদশ শ্রেণির বিবাহিতা এক ছাত্রীকে স্কুলে ফেরানো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গাইঘাটার সবাইপুর আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুহিদাস কবিরাজ জানালেন, ইতিমধ্যে দুই ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। অনুপস্থিত ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়ার ব্যাপার থাকায় তাঁরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলে মনে করা হচ্ছে।

বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল বলেন, ‘‘নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের ছাত্রী সংখ্যা ১০৪৭ জন। ৫ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’’

শিক্ষকেরা মনে করছেন, স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রীদের বিয়ে হলেও তা জানা যায়নি। অনলাইন ক্লাসে বেশিরভাগ ছাত্রী হাজির থাকত না। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা ছাত্রীদের বিয়ে আটকাতে ভাল কাজ করত। সে সবও বন্ধ ছিল। বনগাঁ মহকুমা অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত, বিয়ে হওয়া ছাত্রীদের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া। তা হলে প্রশাসন তদন্ত করে পদক্ষেপ করতে পারবে।’’ সীমান্ত এলাকায় ছাত্রীদের সত্যিই বিয়ে হয়েছে, নাকি তারা পাচার হয়ে গিয়েছে— তা জানা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE