ক্লাস নিচ্ছেন তপনবাবু। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
শিক্ষকের অবসর হয় না।
এই কথাটিই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন বনগাঁ শহরের রেটপাড়া এলাকা বাসিন্দা তপন রায়। স্থানীয় সুভাষনগর ক্ষীরোদাসুন্দরী প্রাথমিক স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন নয় বছর আগে। তাতে কী? সরকারি তথ্য যাই বলুক, তিনি এখনও ওই স্কুলের ‘শিক্ষক’।
স্কুল সূত্রে জানা গেল, ২০০৭ সালে তপনবাবু চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে ওই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা দু’জনে ঠেকেছিল। তাঁদের পক্ষে চারটি ক্লাস সামাল দেওয়ার প্রায় অসাধ্য হয়ে গিয়েছিল। কী ভাবে দৈনন্দিন পঠনপাঠন চলবে ভেবে পাচ্ছিলেন না কেউ। ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন তপনবাবু। তিনি জানান, অবসরের পরেও নিয়মিত স্কুলে আসবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। এখন অবশ্য স্কুলে তপনবাবুকে ধরে স্কুলে পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। স্কুলটিকে প্রাক প্রাথমিক থেকে হয়েছে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তবে তারপরেও অবশ্য নিজের ব্রত থেকে সরেননি সত্তরোর্ধ তপনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকের অবসর বলে কিছু নেই। শিক্ষকের কর্তব্য শিক্ষাদান। বাড়িতে বসে থাকলে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়। তাই স্কুলে আসি।’’
শুধু বয়সের ভার নয়, তপনবাবুর শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। ঘা থেকে সংক্রমণ হওয়ায় তাঁর বাঁ পায়ের কিছুটা অংশ বাদ গিয়েছে। তিনি হাঁটাচলা করেন ক্রাচের সাহায্য। অবসরের পরে স্কুলে পড়ানোর জন্য কোনও টাকা নেন না। উল্টে নিজের টাকায় রিকশা ভাড়া করে স্কুলে আসেন।
তপনবাবুর বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং নাতনি। পরিবারের সবাই তাঁকে স্কুলে আসতে উৎসাহ দেন। রোজ এগারোটা নাগাদ রিকশা করে স্কুলে আসেন। সোমবার শিক্ষক দিবসের দিনেও তিনি স্কুলে এসেছিলেন। হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘শিক্ষকতার মধ্যে থাকলেই আমি সুস্থ থাকি। বলতে পারেন এটাই আমার নেশা।’’
স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কান্তা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তপনবাবু যেভাবে অবসরের পরেও রোজ স্কুলে এসে নিঃস্বার্থ ভাবে পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন সেটা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত।’ স্কুলের অন্য শিক্ষকদের কথায়, ‘‘আমরা ওঁনাকে অনুসরণ করবার চেষ্টা করি। উনি কোনও কারণে স্কুলে না এলে আমরা ফোন করে খবর নিই। তপনবাবু এবং আমাদের স্কুল যেমন সমার্থক হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy