Advertisement
০২ মে ২০২৪
Mid Day Meal

মিড ডে মিলের খরচ বেশি, দায়িত্ব থেকে সরতে চাইছেন শিক্ষকেরা

ক্যানিং ডেভিড সেশুন হাইস্কুলে মিড ডে মিল পায় প্রায় ১২০০ পড়ুয়া। স্কুল সূত্রের খবর, সব পড়ুয়া প্রতিদিন উপস্থিত হয় না। ফলে কোনওরকমে খরচ সামাল দেওয়া যায়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ১০:০২
Share: Save:

মিড ডে মিলে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু সামান্য বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে খুশি নয় স্কুলগুলি। এমনিতেই কম টাকায় মিড ডে মিল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। নতুন বরাদ্দে পরিস্থিতি বদলাবে না বলেই মত তাদের।

ক্যানিং ডেভিড সেশুন হাইস্কুলে মিড ডে মিল পায় প্রায় ১২০০ পড়ুয়া। স্কুল সূত্রের খবর, সব পড়ুয়া প্রতিদিন উপস্থিত হয় না। ফলে কোনওরকমে খরচ সামাল দেওয়া যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণকুমার ভকত বলেন, “প্রতিদিন সব পড়ুয়া মিডডে মিল খায় না। তাই কিছুটা বাঁচোয়া। না হলে এত খরচ কোথা থেকে যে জোগাড় হত জানি না।” তাঁর দাবি, যেটুক বরাদ্দ বেড়েছে, তাতে লাভ হবে না। অন্তত দশ থেকে বারো টাকা করে বরাদ্দ হলে তবে ন্যূনতম পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

বাসন্তীর নফরগঞ্জ বৈদ্যনাথ বিদ্যাপীঠে মিড ডে মিল পায় ৭১২ জন পড়ুয়া। স্কুল সূত্রের খবর, গ্রামের চাষিদের থেকে কম দামে আনাজ কিনে কিছুটা খরচ সামলানোর চেষ্টা করা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত সেন বলেন, “সরকারি বরাদ্দ দিয়ে মিড ডে মিল চালাতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু কিছু করারও নেই। বরাদ্দ আরও খানিকটা বাড়লে সুবিধা হত।”

ক্যানিং রায়বাঘিনী হাইস্কুলে ১০৯৭ জন পড়ুয়া মিড ডে মিলের আওতায় রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক দিন ডিম দেওয়া হয়। বাকি দিনগুলি ডাল, আনাজের তরকারি দেওয়া হয়। কোনও কোনও দিন আবার খিচুড়ি দেওয়া হয়। এভাবেই কোনওরকমে সামাল দেওয়া হচ্ছে। জ্বালানি, রান্নার তেল, মশলা সবেরই দাম বাড়ছে ক্রমাগত।” স্কুল সূত্রের খবর, খরচ সামাল দিতে না পেরে মিড ডে মিলের দায়িত্বে থাকতে চাইছেন না শিক্ষকেরা।

বাসন্তী হাইস্কুলে মিড ডে মিল পাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ন’শো। কিন্তু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অনেক পড়ুয়াই দুপুরের খাবারের সময় খেতে চলে আসে বলে দাবি শিক্ষকদের। তাই প্রতিদিনই দেড়শো-দুশো জনের বাড়তি খাবার রান্না করতে হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পীযূষ পাইক বলেন, “এটা পিছিয়ে পড়া এলাকা। বহু পড়ুয়ারাই বাড়ি থেকে না খেয়ে স্কুলে চলে আসে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকেই প্রতিদিন মিড ডে মিল খায়। ছোট ছেলে-মেয়েরা দু’টো ভাত খেতে এলে বারণ করা যায় না। ফলে প্রতিমাসেই খরচ বেড়ে যায়।” স্কুল সূত্রের খবর, স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে বাড়তি খরচ সামাল দিতে হয়। কখনও কখনও শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাহায্য করেন। প্রধান শিক্ষক জানান, দূষণ এড়াতে কাঠের বদলে গ্যাসে রান্নার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় ফের কাঠের জ্বালানিতেই রান্না হচ্ছে।

মিড ডে মিলে যুক্ত প্রায় সকলেরই দাবি, যে পরিমাণ বরাদ্দ বেড়েছে তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিতই থাকবে পড়ুয়ারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যানিংয়ের এক শিক্ষক বলেন, “কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেন্দ্র সরকার মূর্তি বানাতে পারে। রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে হাজার হাজার টাকা দিতে পারে। কিন্তু স্কুল পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়াতে গেলেই এদের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE