Advertisement
E-Paper

এখনও হল না পাকা সেতু

ভোটের সময়ে অতি অবশ্য মেলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট মিটলে পরিস্থিতি যে কে সেই। বছরের পর বছর এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত মানুষ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।দীর্ঘদিন ধরে সাঁকো ও রাস্তা— দুই-ই বেহাল। এই নিয়ে বার বার বিক্ষোভ দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ভোটের মুখে প্রত্যেকবার সেতু ও রাস্তা সংস্কারের দাবি নিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দেন কুলপির বেলপুকুর পঞ্চায়েতের রাঙাফলা ও ট্যাংরারচরের বাসিন্দারা। তা সামাল দিতে তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা ভোটপর্ব মিটলে কাজ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট মিটে গেলেই সব শেষ।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪২
ভরসা সেই বাঁশের সাঁকো। নিজস্ব চিত্র।

ভরসা সেই বাঁশের সাঁকো। নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘদিন ধরে সাঁকো ও রাস্তা— দুই-ই বেহাল। এই নিয়ে বার বার বিক্ষোভ দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ভোটের মুখে প্রত্যেকবার সেতু ও রাস্তা সংস্কারের দাবি নিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দেন কুলপির বেলপুকুর পঞ্চায়েতের রাঙাফলা ও ট্যাংরারচরের বাসিন্দারা। তা সামাল দিতে তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা ভোটপর্ব মিটলে কাজ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট মিটে গেলেই সব শেষ।

রাঙাফলা ও ট্যাংরারচর গ্রামের মাঝখানে মন্তেশ্বরী নদী। ১৫০ ফুট চওড়া ওই নদীতে আগে খেয়া পারাপার হতো। কিন্তু রাতে খেয়া চলত না দেখে সমস্যায় পড়তেন গ্রামবাসীরা। তাই বছর কুড়ি আগে স্থানীয় মানুষ চাঁদা তুলে একটি সেতু তৈরি করেন। কিন্তু কিছু দিন পরে সেটি ভেঙে যায়। তখন সেচ দফতর থেকে কাঠের একটি সেতু করে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর সংস্কার না হওয়ায় ওই কাঠের সেতুটিও ভেঙে পড়ে। এরপর এত দিন ওই ভাঙা সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার চলছিল।

অনেক আবেদন নিবেদনের পরে মাস কয়েক আগে পঞ্চায়েত থেকে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে নড়বড়ে সেতু দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই একটি পাকা সেতুর প্রয়োজন। কুলপির বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী যোগরঞ্জন হালদার বলেন, “বেলপুকুর পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে থাকায় উন্নয়নে ব্যাহত হয়েছে। সেতুটি সেচ দফতর থেকে করা উচিত।” তবে ওদের সমস্যা সমাধান করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “বিশ বছর ধরে সব দলের নেতাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। ভোটের আগে এলাকায় এসে সবাই শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি।” গ্রামবাসী সুজাউদ্দিন গাজি, নুরমহম্মদ জমাদারদের অভিযোগ, সেতু নির্মাণ মূল সমস্যা ঠিকই, কিন্তু বেলপুকুর মোড় থেকে রাঙাফলা সেতুর মুখ পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার ইট পাতা রাস্তারও অবস্থা খুব খারাপ। সেখানেও মানুষ পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙছে। কিন্তু আজও ওই রাস্তা পাকা হল না। বিষয়টি বহুবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাঁদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।’’

তবে এলাকা ঘুরে দেখা গেল শুধু রাস্তা আর সেতু নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত গ্রামবাসীরা। ওই এলাকায় বেশিরভাগই মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। বহু কষ্টের মধ্যে তাঁদের দিন কাটাতে হচ্ছে। গ্রামের কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি পোতা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। পানীয় জলেরও সংকট রয়েছে।

রাঙাফলা বামনপাড়া গ্রামের রাস্তার পাশে একটি তালপাতা ও খড়ের ছাউনি কুড়ে ঘরটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ শুকনো কাঠের জ্বালানি ঢেকে রেখেছে। ভিতরে গিয়ে দেখা গেল বৃদ্ধা গঙ্গাবালা হাজরা বারান্দায় বসে রয়েছেন। বছর পনেরো আগে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। তার কিছু দিন পরেই মাটির ঘরটি ঝড়ে ভেঙে গিয়েছিল। পরে গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে কোনও রকমে তাঁর একটি থাকার জায়গা করে দেন। ভিক্ষা করেই জীবন কাটান বৃদ্ধা। জানালেন, ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘর নির্মাণের জন্য পঞ্চায়েতে অনেকবার বলেছেন। কিন্তু কেউ শোনেনি। বাধ্য হয়ে এই অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। শীত, গ্রীষ্ম কোনও ভাবে কাটালেও বর্ষায় সমস্যা বাড়ে।

এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কুলপির সিপিএম প্রার্থী রেজাউল হক খাঁ বলেন, “আমি নতুন। ওই বিষয়ে জানা ছিল না। ভোটে জিততে পারলে ওদের দাবিগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।”

bridge election Bamboo bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy