Advertisement
E-Paper

স্কুল বাঁচাতে বেতনের টাকায় শিক্ষক রেখেছেন শিক্ষকেরাই

 স্কুল বাঁচানোর সংগ্রামে নেমেছেন সরকারি তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা!

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৭
প্রধান শিক্ষিকা রীতা ঘোষের (বাঁ দিকে) সঙ্গে স্কুলের অন্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রধান শিক্ষিকা রীতা ঘোষের (বাঁ দিকে) সঙ্গে স্কুলের অন্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।

 স্কুল বাঁচানোর সংগ্রামে নেমেছেন সরকারি তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা!

বেসরকারি বা ব্যক্তি-মালিকানাধীন কোনও স্কুল নয়। সরকারি মাধ্যমিক স্কুল। সরকারি সিদ্ধান্তেই আপাতত সেখানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এ দিকে, প্রায় ২৫০ জন পড়ুয়ার জন্য শিক্ষকের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছিল তিনে। নাজেহাল হয়ে যাচ্ছিলেন ওই তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ওই ভাবে স্কুল চালানো সম্ভব হচ্ছিল না তাঁদের পক্ষে। অগত্যা নিজেরাই বেতন দিয়ে স্থানীয় কয়েক জন উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীকে পড়ানোর জন্য নিয়োগ করেছেন তাঁরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পূজালিতে এ ভাবেই চলছে রঘুনাথপুর জুনিয়র হাইস্কুল।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১৯৬৪ সালে তৈরি হয় পূজালির ওই স্কুল। ১৯৯০ সালে সিইএসসি প্ল্যান্ট তৈরির জন্য স্কুলের জমি অধিগ্রহণ করে নেয়। যার জেরে পুনর্বাসনে পাওয়া প্রায় ১০ কাঠা জমিতে নতুন করে তৈরি হয় স্কুলটি। প্রধান শিক্ষিকা রীতা ঘোষের কথায়, ‘‘২০১৫ সালে আমাদের স্কুল মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। কিন্তু সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। একের পর এক শিক্ষক অবসর নিতে থাকলেও সেই শূন্য পদে আর লোক নেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও গত দু’বছরে এই স্কুল থেকে মাধ্যমিকে পাশের হার ১০০ শতাংশ।’’

রীতাদেবীর কথায়, ‘‘মাস ছ’য়েক পরে আমিও অবসর নেব। এটা তো শুধু চাকরি নয়। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে বলে মনে করি। রঘুনাথপুর এলাকা মূলত সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত। তা ছাড়া, অধিকাংশ পরিবারেরই দিন আনি-দিন খাই অবস্থা।’’ রীতাদেবী জানান, ওই স্কুলে যাতে পড়ুয়াদের ভর্তি করা হয়, সে ব্যাপারে প্রতি বছরই তাঁরা প্রচার চালান এলাকায়। তিনি বলেন, “প্রতি বছরই স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক হামিদ মল্লিক ও আর এক শিক্ষক সৌমেনবাবুকে নিয়ে আমি এলাকার সমস্ত প্রাথমিক স্কুলে হাজির হই। সেখান থেকে পাশ করা পড়ুয়াদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের স্কুলে ভর্তি করতে অনুরোধ করি।’’ এক দিকে পড়ুয়া সংগ্রহের কাজ। অন্য দিকে নিজেদের বেতন থেকে ছয় যুবক-যুবতীকে বেতন দিয়ে স্কুলের পড়াশোনা চালানো। এ ভাবেই স্কুল চালাচ্ছেন তাঁরা।

রীতাদেবী জানান, শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন স্তরে দিনের পর দিন আবেদন জানিয়েও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। এলাকার বিধায়ক অশোক দেবের দাবি, তিনিও ওই স্কুলের উন্নয়নে বিভিন্ন দফতরে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘আমি সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু একটা করেই ছাড়ব। কিন্তু আইনি জটেই সব আটকে রয়েছে।’’ রীতাদেবী বললেন, ‘‘আমি ৬০ হাজার টাকা বেতন পাই। তার প্রায় অর্ধেকটাই স্কুলের নানা প্রয়োজনে খরচ হয়ে যায়। শুধু আমি নই। আরও দু’জন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদেরও বেতনের প্রায় অর্ধেক স্কুলের কাজে খরচ হয়ে যায়।’’

আর এক শিক্ষক সৌমেন মোদকের কথায়, ‘‘স্কুলের মিড-ডে মিলেও আমরা নিজেদের বেতন থেকে কিছু বাড়তি টাকা খরচ করি। আমাদের এখানে অধিকাংশ পড়ুয়াই খুব নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। সেই জন্য মিড-ডে মিলে একটু পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি।’’ স্কুলের শিক্ষকেরা যে যুবক-যুবতীদের পড়ানোর কাজে নিয়োগ করেছেন, তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘আমাদের যাতায়াতের একটা খরচ রয়েছে। তবু টাকা নিতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু রীতাদি আমাদের জোর করেই হাতে টাকা গুঁজে দেন।’’ রীতাদেবীরা নিজেদের বেতন থেকে শুধু শিক্ষকই রাখেননি, নিয়োগ করেছেন কয়েক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেও।

দোতলা ওই স্কুলবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, একের পর এক বড় বড় ঘর। পড়ুয়ারা রয়েছে। অভাব শুধু শিক্ষকের। রীতাদেবী বললেন, ‘‘স্কুলটা যেন বন্ধ না হয়ে যায়। আমি তো আর ছ’মাস।’’ জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই স্কুলের বিষয়টি জানি। শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়।’’

Raghunathpur junior High school Pujali পূজালি Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy