পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। কাকদ্বীপের এই চিত্র আপাতত তৃণমূলকে স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু এখনও কয়েকটি ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাকি। কারণ ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৭টি আসন এবং ১২৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ১৩টিতে হচ্ছে ত্রিমুখী লড়াই। বাকি প্রায় সবগুলিতেই তৃণমূলের সঙ্গে দ্বিমুখী লড়াইয়ে নেমেছে বিরোধীরা।
তবে একমাত্র বিবেকানন্দ পঞ্চায়েত ছাড়া তৃণমূল নেতারা কোনওটাই চাপ বলে মনে করছেন না। বিবেকানন্দ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অবস্থা অনেকটাই ল্যাজেগোবরে। এখানে তৃণমূলের একটি মাত্র আসনে গোঁজপ্রার্থী থাকলেও বাকি জায়গায় পুরনো তৃণমূল কর্মীরা প্রায় বৃহত্তর জোটের অংশ হয়ে গিয়েছে। তাই গোঁজ থেকেও না থাকার মতোই অবস্থা। নেতা-মন্ত্রীরা বিবেকানন্দ পঞ্চায়েত নিয়ে অনেকটা বেশি সময় দিচ্ছেন। কাকদ্বীপ বিধানসভা এলাকায় দলের নেতা তথা মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘আমি একবার সাধারণ মানুষের সামনে গিয়ে আবেদন করলে বিরোধীরা খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি (পশ্চিম) অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল যদি তাঁদের জেতার ব্যাপারে এতই আত্মবিশ্বাসী হয়, তা হলে তো বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করার সময়ে গুলি-বোমা নিয়ে আক্রমণ করত না। এ বার পঞ্চায়েতে আমরা রেকর্ড আসনে জিতব।’’
কাকদ্বীপ মহকুমার অন্য ব্লকের মধ্যে সাগরের অবস্থা খুবই খারাপ। মোট ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাত্র তিনটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল। তবে ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সবগুলিতেই ভোট হবে। সাগর ব্লকে প্রায় সবগুলি পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের একাধিক গোঁজ প্রার্থী নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। সেগুলির বেশির ভাগই প্রত্যাহার হয়ে গিয়েছে। এখানে এক তৃতীয়াংশ আসনে লড়াই ত্রিমুখী। তা ছাড়া বেশির ভাগ আসনেই বিরোধীদের জোটের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে তৃণমূলকে।
নামখানার ৯২ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতির একটিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়নি তৃণমূল। তবে শিবরামপুর, হরিপুর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জের মতো কয়েকটি জায়গায় এখনও তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসকদলের কাছে। নামখানার ওই পঞ্চায়েতগুলিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বেশি। সেই হিসেবে নির্দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৫০ শতাংশ গোঁজ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়ে গিয়েছে। তার উপরে বিরোধীদের বৃহত্তর জোট নামখানায় হয়নি। নামখানায় বেশির ভাগ পঞ্চায়েতেই বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের দূরত্ব রয়েছে। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কিছুটা আসন সমঝোতা করছে সিপিএম। তাই কোন্দল থাকলেও ব্লক নেতারা শেষ পর্যন্ত বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ারই আশা করছেন।
পাথরপ্রতিমার ২৩৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে মাত্র ১টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। ৪৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেই লড়াই হচ্ছে। পাথরপ্রতিমায় তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী বেশির ভাগ জায়গায় ছিল না। রামগঙ্গা, গোপালনগর-সহ তিনটি আসনে তৃণমূলের অল্প কিছু গোঁজ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরেও রয়ে গিয়েছে। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির লড়াইয়ের চিত্রটা কিছুটা আলাদা।
জি প্লট, হেরম্বগোপালপুর, শ্রীনারায়ণপুর পূর্ণচন্দ্রপুর, গোপালনগর পঞ্চায়েতর বেশির ভাগ এলাকায় মূলত দ্বিমুখী লড়াই হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৪০ শতাংশ আসনে বিরোধী জোট হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গায় বিরোধী জোটের সঙ্গে দ্বিমুখী লড়াইয়ে নামতে হবে তৃণমূলকে।