Advertisement
E-Paper

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের কথা বলুন, নির্দেশ তৃণমূলের নেতৃত্বের

প্রসূতি, গর্ভবতী, শিশুদের কথা আপাতত থাক। ক’দিন বরং ভোটের কাজে মন দিন— এমনই নির্দেশ এসেছে শাসক দলের বিদায়ী মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার তরফে। যা শুনে থরহরিকম্প অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মীরা। বিতর্কও দানা বেঁেধছে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৭

প্রসূতি, গর্ভবতী, শিশুদের কথা আপাতত থাক। ক’দিন বরং ভোটের কাজে মন দিন— এমনই নির্দেশ এসেছে শাসক দলের বিদায়ী মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার তরফে। যা শুনে থরহরিকম্প অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মীরা। বিতর্কও দানা বেঁেধছে।

মন্ত্রী নাকি তাঁদের বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা-বোনেদের কাছে উন্নয়নের কথা বলুন। সম্প্রতি উস্তিতে তৃণমূলের দলীয় সভায় মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা এই আবেদন রেখেছেন। শ্রোতার আসনে ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীরা! খোদ বিদায়ী মন্ত্রীর আবেদন যখন, সে তো এক রকম সরকারি নির্দেশই হল! তাই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে এখন সাজ সাজ রব। ভোটের কাজে নামতে হবে যে!

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উস্তি বিধানসভা কেন্দ্র মগরাহাট ১ ব্লকের মধ্যে পড়ে। যেখানে ৩২৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন কর্মী ও একজন সহায়িকা কাজ করেন। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীনে আছেন কয়েকশো আশা কর্মী। তাঁদের কাজকর্ম শিকেয় তুলে মিছিল-মিটিংয়ে সামিল হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বেশ কয়েকটি মিছিলে দেখাও গিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন ইউনিফর্ম পড়েই মিছিলে হেঁটেছেন।

এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, ‘‘বেলা ৩টে থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা ওই সভায় মন্ত্রী-সহ উপস্থিত বিভিন্ন নেতারা জানিয়েছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে ভোট দেওয়ার জন্য বোঝাতে হবে। সবুজ সাথী প্রকল্প, স্কুলের জামা-জুতো দেওয়ার মতো রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নের কথা বোঝাতে বলা হয়েছে। দলের মিছিলে যোগ দিতেও বলা হয়েছে।’’ এই কথা শোনার পরে নাম প্রকাশে এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) যদি এত কাজই করেছেন, তা হলে লোকে তো এমনিতেই ভোট দেবে। আমাদের এত ঝক্কি পোহাতে বলা হচ্ছে কেন!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বেতন বাড়ানোর নাম নেই, শুধু মিছিলে যাও, মিটিংয়ে যাও। কিন্তু উপায় বা কী! ট্যাঁ-ফু করলে এই কাজটুকুও তো যাবে।’’

মগরাহাটের সিপিএম নেতা শানোয়াজ মোকামির দাবি, ‘‘বিষয়টি আমরাও শুনেছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব।’’

ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে এখনও লিখিত কোনও অভিযোগ হয়নি। মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’

মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন অবশ্য কিছু রাখঢাক করছেন না। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘সরকারি কর্মী বলে কি ওঁরা দল করতে পারেন না’’— বলেই ফোন কেটে দেন ডাকসাইটে নেতা।

প্রশ্ন উঠছে, মিটিং-মিছিলে যেতে গিয়ে কি কাজে ঢিলে দিতে হচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি বা আশা কর্মীদের?

যে সব দায়িত্ব পালন করতে হয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল— অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও প্রসূতি মায়েদের খাবার দেওয়া, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যবিধি শেখানো, সেই সঙ্গে প্রাক প্রাথমিকের পড়াশোনায় তালিম দেওয়া। আশা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। টিকাকরণ করেন। শিশুদের পোলিও খাওয়ানোও তাঁদের কাজ।

কিন্তু মিটিং-মিছিলে যেতে গিয়ে এই সব কাজে কি গাফিলতি হচ্ছে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আশা কর্মীর কথায়, ‘‘মিটিং-মিছিল থাকলে সে দিন অন্য কাজ হচ্ছে না, সে তো বটেই। আমরা এখন কোন দিক সামলাই!’’

election 2016 tmc cpm bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy