Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ঝড়ে ছিটকে যাওয়া ট্রলারের খোঁজ নেই এখনও

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সংখ্যাটা ১৬ তে নেমে এসেছিল। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুধবার রাত পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে হঠাৎ ঝঞ্ঝায় নিখোঁজ মৎস্যজীবীর সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল ১০৪-এ।

হরি দাসের জন্য চিন্তায় স্ত্রী সুজনা। — নিজস্ব চিত্র।

হরি দাসের জন্য চিন্তায় স্ত্রী সুজনা। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সংখ্যাটা ১৬ তে নেমে এসেছিল। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুধবার রাত পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে হঠাৎ ঝঞ্ঝায় নিখোঁজ মৎস্যজীবীর সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল ১০৪-এ। নিখোঁজের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি ট্রলার। সেই সংখ্যাটা ৭। এই তথ্য দিচ্ছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। মৎস্য দফতরের চেষ্টায় উপকূলরক্ষী বাহিনী ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে একটি জাহাজ পাঠিয়েছে মৎস্যজীবীদের খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার-কাজ। মৎস্য দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, মঙ্গলবার বাংলাদেশে সমুদ্র-ঝড় আছড়ে পড়েছে। সেই দাপটেও ভেসে গিয়ে থাকতে পারে কিছু ট্রলার।

মৎস্যজীবী সংগঠনের এই দাবির সঙ্গে অবশ্য সরকারের হিসেবে অমিল আছে। বুধবার বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান কলকাতায় বলেন, ‘‘৬টি ট্রলার নিখোঁজ ছিল। ৪টি ফিরে এসেছে। একটিকে কাকদ্বীপ থেকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। ‘গঙ্গা মাঈ’ নামে একটি ট্রলারের খোঁজ নেই।’’

সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘‘নিখোঁজের সংখ্যা বেড়েছে। বকখালি থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।’’

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির নেতা বিজন মাইতি, সতীনাথ পাত্ররা জানিয়েছেন, উপকূল থেকে কম দূরত্বের এলাকাগুলিতে মৎস্যজীবীদের ট্রলার দিয়েই খোঁজ চালানো হচ্ছে। এ দিনও চারটি ট্রলার কাকদ্বীপ থেকে রওনা দিয়েছে নিখোঁজ ট্রলারগুলির খোঁজে।

সোমবার মাঝরাত থেকে ঝড় শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবারই অভিযোগ উঠেছিল, আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে খারাপ আবহাওয়ার আগাম খবর পাঠানো হয়নি মৎস্য দফতর বা মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে। তবে মঙ্গলবার থেকে আবার তা পাঠানো শুরু হয়েছে। মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে পাঠানো সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উপকূল এবং গভীর সমুদ্রে ৫৫-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। নিম্নচাপ পুরোপুরি না কাটলে যেন মৎস্যজীবীরা আর সমুদ্রের দিকে না যান। গতকাল বিকেলে ওই বার্তা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলিও। সোমবারের ঘটনার পরে আর সমুদ্রের দিকে যাচ্ছেন না মৎস্যজীবীরা। কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালির মৎস্য বন্দরগুলিতে প্রচুর ট্রলার নোঙর করে রাখা হয়েছে।

তবে মৎস্যজীবীদের খোঁজার ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের শেষ সঙ্কেত গভীর সমুদ্রের যে সমস্ত এলাকাগুলি থেকে এসেছিল, সেগুলিতে গিয়েও অনেক ট্রলারকেই পাচ্ছে না উপকূলরক্ষী বাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঝড়-বৃষ্টিতে নোঙর ছিঁড়ে ভেসে গিয়ে থাকতে পারে সেগুলি। নিম্নচাপের জেরে ঝড়বষ্টিতে বাংলাদেশ উপকূল এলাকায় মঙ্গলবার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই দেশের জল সীমান্তে মাছের অপেক্ষায় থাকা ট্রলারগুলি সে দিকেও ভেসে গিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ দিন ১০ জন মৎস্যজীবী-সহ ‘এফবি-মা তারা’ নামে একটি ট্রলার উদ্ধার হয়েছে।

পুরো পরিস্থিতিতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন কাকদ্বীপের নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পরিবারগুলি। নিকটাত্মীয়দের ফিরে আসার অপেক্ষায় নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ। ‘এফবি পল্লবী’র যে দু’জন সমুদ্রে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ ছিলেন, তাঁদের একজন বাপি পাল উদ্ধার হয়েছেন মঙ্গলবারই। ওই ট্রলারের মাঝি তথা রামকৃষ্ণ পঞ্চায়েতের কালীনগর এলাকার বাসিন্দা হরিদাস এখনও নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সুনসান পরিবেশ। স্ত্রী সুজনা সজল চোখে বললেন, ‘‘সকলেই খুঁজছে। কিন্তু এখনও তো কোনও খবর এল না। দুই সন্তানকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

trawler missing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy