Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

গাছের ডাল ভেঙে জখম দুই ছাত্রী

যশোর রোডের পাশে একটি বটগাছের ডাল কাটছিল শ্রমিকেরা। ডাল ভেঙে পড়ে চলন্ত গাড়ির উপরে। বুধবার বেলা সওয়া ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাবরা বিডিও অফিসের সামনে। জখম ৪ মহিলার মধ্যে দু’জন যাচ্ছিলেন হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজে ভর্তি হতে। সকলকে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিন জনকে পাঠানো হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। দুই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিকেলের দিকে তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আহত ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বারাসত হাসপাতালে এলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

আহত ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বারাসত হাসপাতালে এলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

যশোর রোডের পাশে একটি বটগাছের ডাল কাটছিল শ্রমিকেরা। ডাল ভেঙে পড়ে চলন্ত গাড়ির উপরে। বুধবার বেলা সওয়া ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাবরা বিডিও অফিসের সামনে। জখম ৪ মহিলার মধ্যে দু’জন যাচ্ছিলেন হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজে ভর্তি হতে। সকলকে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিন জনকে পাঠানো হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। দুই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিকেলের দিকে তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কুড়ুল, করাত ফেলে পালায় শ্রমিকেরা। কাদের নির্দেশে তারা গাছ কাটছিল, তা স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। পুরসভা, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, পূর্ত দফতর (সড়ক) কেউই এর দায় নিতে চায়নি। শ্রমিকেরা যে ডালটি কাটছিল সেটি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটেছে, নাকি পাশের কোনও ডাল ভেঙে পড়েছিল, তা নিয়েও ধন্দ আছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, ‘‘কারা ওই গাছের ডাল কাটছিল, তা আমরা এখনও জানতে পারিনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চার জন শ্রমিক এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ডাল কাটার কাজ শুরু করেছিল। কেউ কেউ জানতে চেয়েছিলেন, কারা তাদের পাঠিয়েছে, কেনই বা হঠাৎ ডাল কাটা হচ্ছে। সে ব্যাপারে শ্রমিকদের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি।

ঘটনার সময়ে গাছের নীচ দিয়ে যাচ্ছিল একটি ছোট গাড়ি, একটি স্কুটি এবং একটি অটো। মনীষা ঘোষ ও রিয়া শিকদার নামে দুই ছাত্রীর বাড়ি হাবরারই বেড়গুমে। তাঁরা এ দিন শ্রীচৈতন্য কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে আসছিলেন। বাস থেকে নেমে তাঁরা হেঁটে যাচ্ছিলেন কলেজের দিকে। অটোটি বারাসতের দিক থেকে হাবরার দিকে আসছিল। ছোট গাড়িটি হাবরার দিক থেকে যাচ্ছিল বারাসতের দিকে। পাশাপাশি চলছিল একটি স্কুটিও। ডাল ভেঙে ছোট গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়। চালক অল্পবিস্তর চোট পান। তিনি অবশ্য পরে গা়ড়ি নিয়ে বেরিয়েও যান।

স্কুটি চালাচ্ছিল একটি মেয়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চোখের সামনে ওই ঘটনা দেখে ভয়ে পড়ে যায় মেয়েটি। তবে উঠে চলেও যায়। অটোর উপরে ডালের একটা বড় অংশ পড়েছিল। তাতে জখম হন দুই মহিলা। তাঁদের নাম মায়া কীর্তনিয়া ও সুচিত্রা বিশ্বাস। খবর পেয়ে হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কলেজেও খবর পৌঁছয়। সেখান থেকে পড়ুয়ারা ছুটে আসেন। জখমদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে বারাসত হাসপাতালে যান হাবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘কারা ডাল কাটছিল, পুলিশকে তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আহতদের চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে বলেও ঘোষণা করেছেন তিনি। এ দিন ঘটনার পরে ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক যশোর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও কলেজের পড়ুয়ারা বিশাল ভাঙা ডালটি কেটে রাস্তা সাফ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে স্বাভাবিক ভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।

কয়েক বছর আগে গাইঘাটার মণ্ডলপাড়া এলাকায় যশোর রোডের পাশে গাছের ডাল ভেঙে অটোর উপরে পড়ে মারা গিয়েছিলেন চার যাত্রী। সে বার অভিযোগ উঠেছিল, কাঠ পাচারকারীরা গাছের ডাল কিছুটা কেটে রেখে দিয়েছিল। ওই ডাল ভেঙে পড়েই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। যশোর রোডের ধারে গাছের ডা‌ল কাটার দায়িত্ব কাদের, তা নিয়ে সে বারও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

অটোর উপরে উল্টে পড়ে ভাঙা ডাল।

এ বারও একই পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাবরা পুরসভার পক্ষ থেকে কয়েক দিন ধরে যশোর রোডের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি লাগানোর জন্য গাছের ডাল কাটা হচ্ছিল। এ দিনও পুরসভার পক্ষ থেকেই ডাল কাটা চলছিল বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। যদিও পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস তা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের লোকেরা এ দিন গাছ কাটছিল না। বিদ্যুতের খুঁটি লাগানোর জন্য কিছু গাছের ডাল কাটতে হয়েছে। কিন্তু পুরসভার পক্ষ থেকে যাঁরা ওই কাজ করছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এ দিন ডাল কাটেননি।’’

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বারাসত সাব-ডিভিশনের আধিকারিক তুষার রায়েরও দাবি, ‘‘আমরা গাছ কাটছিলাম না। হাবরা পুরসভার তরফে বিদ্যুতের খুঁটি লাগানোর জন্য কিছু ডাল কাটা হচ্ছিল। তবে এ দিন কারা ডাল কাটছিল, তা বলতে পারব না।’’ পূর্ত দফতরের বারাসত ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার কুন্তল দে-ও জানিয়েছেন, তাঁদের লোকজন গাছের ডাল কাটছিল না।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পূর্ত দফতর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় পুরসভা-পঞ্চায়েত যে-ই এই কাজ করুক না কেন, সে জন্য বন দফতরের অনুমতি নিতে হয়। হাবরা পুরসভার উপ পুরপ্রধান রাখি দাস বলেন, ‘‘ডাল কাটার বিষয়ে বন দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা, তা খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’’

জেলা বনাধিকারিক নিতাই সাহার বক্তব্য, ‘‘কারা গাছের ডাল কাটছিল জানি না।’’ ক’দিন ধরে পুরসভা যে কাজ করছিল, সে ব্যাপারে অনুমতি নিয়েছিল কিনা, তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি জানান, গাছের ক্ষতি না করে যদি পুরসভা ডাল কাটে, তবে তা তারা করতে পারে। এ ব্যাপারে বন দফতরের অনুমতি না হলেও চলে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE