কূলেশ্বরী কালী প্রতিমা। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
কথিত আছে, প্রায় ৪৫০ বছর আগে এক সাধক টাকি এলাকায় একটি বটগাছতলায় ঘট পুজো করেন। এরপরে সেই ঘট জোয়ারের জলে ভেসে যায়। টাকির এক জমিদার স্বপ্নাদেশ পেয়ে ইছামতীর পাড়ে পড়ে থাকা সেই ঘট এনে পুজো শুরু করেন। শুরু হয় টাকি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত কূলেশ্বরী কালী মন্দিরের পুজো। বর্তমানে যেখানে এই মন্দির, সেই চত্বরে ঘট পাওয়া গিয়েছিল। যেহেতু ঘট পাওয়া গিয়েছিল ইছামতীর কূলে, তাই মন্দিরের নাম দেওয়া হয় কূলেশ্বরী। সে সময়ে নদী ছিল মন্দিরের একদম পাশেই।
প্রথমে গোলপাতার ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে ঘট স্থাপন করে পুজো শুরু হয়। এ ভাবে প্রায় দেড়শো বছর চলার পরে পাকা মন্দির করে দেন টাকির জমিদারেরাই। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মোহন্ত দিব্বানন্দ তীর্থনাথ জানান, প্রথমে প্রায় দেড়শো বছর ঘট পুজো হত। তখন কালী প্রতিমা ছিল না। এরপরে কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। সেই প্রতিমাই এখনও পূজিত হচ্ছেন।
মন্দির সূত্রের খবর, মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে এই পরিবারের প্রথম পূজারি অনন্ত মৈত্রকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে টাকির এক জমিদার নিয়ে আসেন। তাঁকে পরবর্তী কালে ‘চক্রবর্তী’ উপাধি দেওয়া হয়। তারপর থেকে অনন্ত মৈত্রের পরিবারের সদস্যরাই বংশ পরম্পরায় পুজো করছেন পালা করে।
মন্দিরের দেবী মূর্তিকে প্রতি দিন ভোরে ঘুম থেকে জাগানো হয়। তারপর হাতমুখ ধুয়ে ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান করিয়ে পুজো ও আরতি হয়। তারপর ফের বেলা সাড়ে ১১টায় পুজো হয়। দেওয়া হয় আমিষ ভোগ। দুপুরে দেবীকে ফের ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে জাগিয়ে সন্ধ্যারতির পরে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়।
কালীপুজোর আগে একাদশীতে অঙ্গরাগ, অর্থাৎ মূর্তি রং করানো হয়। পুজোর দু’দিন আগে থেকে মাকে অন্তত আটটি বেনারসি এক সঙ্গে পরানো শুরু হয়ে যায়। মন্দিরের পুরোহিতেরা জানান, পুজোর আড়ম্বর প্রতি দিন বেড়ে চলেছে। পুজোর অন্তত দু’সপ্তাহ আগে থেকেই ভক্তেরা বেনারসি শাড়ি পাঠাতে শুরু করে দেন। পুজোর দিন বিভিন্ন সোনার অলংকারে মাকে সাজিয়ে তোলা হয়। সেই সঙ্গে গলায় জবা ফুলের মালা ও ১০৮টি পদ্মফুলের মালা পরানো হয়।
টাকিতে এসে পর্যটকেরাও এই মন্দিরে আসেন পুজো দিতে। পুজোর দিন ছাগল বলি দেওয়া হয়। আগে যদিও প্রায় একশোটি ছাগল বলি হত, এখন সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই বলির মাংস, কয়েক রকমের মাছ রান্না করে ভোগ নিবেদন করা হয়। এ ছাড়াও দেওয়া হয় দই-মিষ্টি। কালী পুজোয় বহু ভক্ত আসেন মাটির হাঁড়িতে করে বিভিন্ন ভোগ দিতে। বহু দিন ধরে এই প্রথা চলে আসছে। স্থানীয় অনেকের কাছেই এই দক্ষিণা কালী বাড়ির মেয়ের মতো। মন্দিরের পূজারিরা জানান, অনেকেই মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে বিভিন্ন সময় মন্দিরে এসে বিভিন্ন ভোগ দিয়ে যান।
মন্দির সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে সংস্কারের কাজ চলছে। মন্দির যেখানে ছিল, সেখানেই নতুন মন্দির হচ্ছে প্রতিমা না সরিয়েই। ভবিষ্যতে আরও আকর্ষক হয়ে উঠবে এই মন্দির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy