Advertisement
E-Paper

দিদির ধমকে কি থামবে ভেড়িতে তোলাবাজি, শঙ্কা

মেছোভেড়িতে তোলাবাজি বন্ধ করতে বললেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা শুনে হাড়োয়া-মিনাখাঁর বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন না, কতটা আশ্বস্ত হবেন তাঁরা।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩৭

এই সব এলাকার দখল নিয়েই যত গণ্ডগোল। নিজস্ব চিত্র।

এই সব এলাকার দখল নিয়েই যত গণ্ডগোল। নিজস্ব চিত্র।

মেছোভেড়িতে তোলাবাজি বন্ধ করতে বললেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা শুনে হাড়োয়া-মিনাখাঁর বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন না, কতটা আশ্বস্ত হবেন তাঁরা।

এখনও মাস ঘোরেনি। গত ৩ ডিসেম্বর মেছোভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি-বোমার লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল হাড়োয়ার আমতা-খাটরার ভানুরঘেরি এলাকা। বাবু মণ্ডল, আশাদুল গাজি, নওয়াদ বৈদ্য, জনাব মণ্ডলরা গুলিতে জখম হন, ভেড়ির বাঁধ কেটে দেওয়াতে নষ্ট হয় কয়েক লক্ষ টাকার মাছ। হাড়োয়ার এই নেতারা দিদির বকুনিতে তোলাবাজি বন্ধ করবেন কি, প্রশ্ন গ্রামবাসীদের।

গত শনিবার কালীঘাটে উত্তর ২৪ পরগনার নেতাদের বৈঠকে ডাকেন মমতা। ইটভাটা, মেছোভেড়ি থেকে তোলা নিলে দল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এলাকার নাম করে করে বলেন, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, কোথায় কী হচ্ছে তিনি সব জানেন।

এলাকার মানুষ অবশ্য তাতে ভরসা পাচ্ছেন না। তাঁদের আক্ষেপ, রাজনৈতিক পালাবদলে হাড়োয়া-মিনাখাঁর ছবি বদলায়নি, দলনেত্রীর তিরস্কারেও বদলাবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূল আমলে ভেড়ি নিয়ে হানাহানি কমেনি, বরং বেড়েছে। কারণ, দলে দ্বন্দ্ব থাকলেও সিপিএম জমানায় হাড়োয়ার মেছোভেড়ি থেকে তোলা টাকার অধিকাংশই (অনেকের দাবি, বছরে ৫ কোটি টাকা) যেত দলের তহবিলে। অভিযোগ, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সেই টাকা জমা হতে থাকে কিছু স্থানীয় নেতার হাতে। তা নিয়ে বিবাদ তীব্র হয় তৃণমূলে।

গোপালপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকার বাবু মন্ডল, আশাদুল গাজি বলেন, ‘‘মেছোভেড়ি কোন গোষ্ঠীর দখলে থাকবে, তা নিয়ে তৃণমূলে মারামারি লেগেই আছে। এর মধ্যে আবার তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর সাথে সিপিএমের লোক যুক্ত হয়ে গরিব মানুষের উপর হামলা শুরু করেছে। শান্তির মিছিলের নাম করে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি-বোমা ছোঁড়া হয়। আলাঘর, মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’’

ইদানীং কালের মধ্যে ভেড়ি দখলের লড়াই তীব্র চেহারা নিয়েছে হাড়োয়ার গোপালপুর ২ পঞ্চায়েত আমতা-খাটরা এলাকার ভানুরঘেরি, গাগরামারিঘেরি, দেওয়ানঘেরি, নতুনঘেরি ‌এলাকায়। ৩ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি দল বন্দুক, মাসকেট হাতে গাগরামারিতে সাত্তার মণ্ডলের নতুনঘেরিতে হামলা চালায়। তারা গুলি-বোমা ছুঁড়লে ওই মেছোভেড়ির কর্মীরা গোড়ায় পালায়। পরে তারা পাশের ভানুরঘেরি থেকে লোকজন জোগাড় করে রুখে দাঁড়ালে উভয়পক্ষের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয়।

তারই মধ্যে ওই মেছোভেড়ির বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়া হলে মাছের ক্ষতি হয়। ভাঙচুর হয় আলাঘর। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দু’পক্ষের মধ্যে লড়াই চলার পর পুলিশ গেলে হামলাকারীরা পালায়।

এই গণ্ডগোলে উঠে আসে তৃণমূলের দুই নেতার নাম গোপালপুর ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান হাফিজ মন্ডল, এবং অঞ্চল সভাপতি বাকবুল কালাম মুন্সি। উপপ্রধান হাফিজ মণ্ডল দলীয় বিধায়ক জুলফিকার আলির ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। অন্য দিকে, বাকবুল তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মাদার গাজির ঘনিষ্ঠ। হাফিজ দাবি করেন, মেছোভেড়ি থেকে সংগৃহীত কয়েক লক্ষ টাকা গরিব মানুষকে দেওয়ার জন্য বাকবুল ও মাদার গাজির হাতে দেওয়া হলেও, তাঁরা তার হিসেব দিতে পারছেন না। তাই মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।

মাদার গাজির বক্তব্য, অভিযোগ মিথ্যা। ‘‘কেবল দোষ দিলেই হবে না, প্রমাণ করতে হবে,’’ চ্যালেঞ্জ তাঁর। বিব্রত জেলা নেতৃত্ব ওই এলাকার অঞ্চল কমিটি ভেঙে তদন্ত শুরু করে।

তবে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এলাকার বেশ কয়েকটা মেছোভেড়ির টাকা তৃণমূলের পক্ষে গরিব মানুষের মধ্যে বিলি-বণ্টনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, গত ২০১৩-১৪ সালে এলাকার তৃণমূলের কিছু নেতা তা আত্মসাৎ করেছেন। হাড়োয়া ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সঞ্জু বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত আর্থিক বছরে গাজিতলার ১২৬৫ বিঘা ভেড়ি থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা তোলা হলেও তা গরিব মানুষের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে না। ফলে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তোলাবাজি রোখার বিষয়ে যা বলেছেন, তা আমরা সমর্থন করছি। তোলাবিজা করলে দিদিকে রিপোর্ট দেবো। গরিবদের টাকা না দেওয়ার বিষয়টিও দিদিকে জানানো হচ্ছে।’’

নানা পক্ষকে নিয়ে বেশ কয়েক বার আলোচনায় বসেছেন নেতারা। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের উৎস মেছোভেড়ির দখল নিয়ে কোনও সমঝোতায় আসতে সব পক্ষই নারাজ। তাই মীমাংসা হচ্ছে না।

দলীয় সূত্রে খবর, নেতাদের ক্রমাগত বিবাদের কথা মমতার কানেও পৌঁছেছে। তাই মমতা সেদিন বলেন, তিনি দলের নেতাদের বিবাদের কথা সব জানেন। কিন্তু তাঁর এই ধমকে কতটা কাজ হবে, মেছোভেড়ি নিয়ে বিবাদ কতটা কমবে, সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

কী বলছেন মমতার বৈঠকে থাকা নেতারা? হাড়োয়ার বিধায়ক জুলফিকার আলি মোল্লা বলেন, ‘‘হাড়োয়ায় তোলাবাজির বিষয়ে কিছু জানতে পারলে তার প্রতিবাদ করব। কেউ এমন অন্যায় করলে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে।’’

এরপরেও কী বদলাবে পরিস্থিতি, কোটি টাকার ব্যবসায় এখন প্রশ্ন সেটাই।

mamata banerjee hooliganism tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy