Advertisement
E-Paper

মা-মেয়েকে খুন, বিভ্রান্ত মনোবিদেরা

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে মুর্শিদার স্বামী আজিজুল মোল্লা বাড়ি ফিরে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন মেঝেয় রক্তের দাগ।

মৌমিতা করগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০০
নিহত শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র

নিহত শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র

ঠিক কোন মানসিক অবস্থায় পৌঁছলে মায়ের গলায় দা-এর কোপ বসিয়ে, নিজের সন্তানকে গলা টিপে খুন করতে পারেন কোনও তরুণী? আর তার পরে গল্প ফাঁদতে পারেন দুষ্কৃতী হামলার? মঙ্গলবার বারুইপুরের খুনের ঘটনা সামনে আসার পরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বহু মানুষের মনে।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে মুর্শিদার স্বামী আজিজুল মোল্লা বাড়ি ফিরে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন মেঝেয় রক্তের দাগ। স্ত্রী, কন্যা ও শাশুড়ির খোঁজে বেরিয়ে প্রতিবেশীর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করেন মুর্শিদাকে। মুর্শিদা দাবি করেন, এক দল দুষ্কৃতী ঢুকে তাঁর মাকে খুন করে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছে। এবং তাঁকে ওই সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। বছর বাষট্টির সায়েরা বেওয়ার মৃতদেহ উদ্ধার হয় রাতেই। এ দিন পুলিশি জেরায় মায়ের পাশাপাশি নিজের কন্যা সন্তানকেও খুনের কথা তিনি কবুল করেন বলে দাবি পুলিশের।

মনোরোগ চিকিৎসক শিলাদিত্য রায় বলেন, ‘‘হয়তো মেয়েটির আগে থেকেই কোনও মানসিক ব্যাধি ছিল। কোনও চেপে রাখা পারিবারিক সমস্যার প্রতিফলন ঘটেছে এই ঘটনায়। অথবা মায়ের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে টানাপড়েনও থাকতে পারে। এই কন্যা সন্তানকে কেন্দ্র করে সেই মনোমালিন্য এমন
জায়গা পৌঁছ‌েছিল যে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন ওই মহিলা।’’

প্রশ্ন উঠেছে মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য থাকলেও ২২ দিনের সন্তানকে নিয়ে এমন কী সমস্যা তৈরি হতে পারে? পুলিশকে আজিজুল জানিয়েছেন, মেয়ে হওয়ার পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন মুর্শিদা। বহু বার মেয়েকে খুন করার কথাও বলতেন তিনি। এমনকী মেয়েকে খুন করা নিয়ে মা সায়েরার সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছিল মুর্শিদার। মনোবিদ নীলাঞ্জনা স্যান্যালের কথায়, ‘‘কোনও মেয়ে নিজের নারী জন্মটাকেই অত্যন্ত ছোট ও নিচু বিষয় হিসাবে ভাবলে তাঁর কাছে কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’’ নীলাঞ্জনাদেবী জানান, নিজের অক্ষমতা, নিজের প্রতি হেয় মনোভাব থেকে হয়তো কন্যাসন্তান ওই মহিলার কাছে এত বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে, যে তা থেকে তিনি মুক্তি পেতে চেয়েছেন। কিন্তু মুক্তি পেতে গিয়ে খুনের মতো কাজ করে ফেললে বুঝতে হবে তিনি মানসিক ভারসাম্যবোধটাই গুলিয়ে ফেলেছেন। তাঁর অনুমান, মহিলা সম্ভবত নিজের নারী জন্মের জন্য
মনে মনে মাকে দায়ী করতেন। পাশাপাশি মনে ভয় জন্মেছিল যে বাচ্চাটাকে মেরে ফেললে মা ধরিয়ে দিতে পারেন। সে কারণেই মাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

মনোবিদদের একাংশের মতে, মুর্শিদার মায়ের মেয়েকে বড় করার মধ্যেও কোথাও খামতিও থাকতে পারে। তাই মা তাঁর কাছে জন্মদাত্রী হয়ে রয়ে গিয়েছেন, মা হয়ে উঠতে পারেননি। আর মুর্শিদাও পারেননি নিজের সন্তানের মা হয়ে উঠতে। পরে ঠান্ডা মাথায় নিজেকে বাঁচানোর যে ছক কষেছিলেন তিনি, সেখানেও হয়তো তার মাথায় কাজ করেছিল নিজেকে বাঁচাতে হবে কারণ, বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে তিনি ফের পুত্র সন্তানের জননী হতে পারবেন।

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম অবশ্য এই সব যুক্তির কোনওটিই মানতে চাননি। তাঁর মতে, ‘‘অনেক সময় সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মায়েদের মধ্যে এক ধরনের অবসাদ তৈরি হয়। এই অবসাদ তিনটি স্তরে হতে পারে। ‘পোস্ট নাটাল ব্ল্যুজ’ অর্থাৎ সন্তান জন্মের পরে প্রথম দিন সাতেকের মধ্যেই এক ধরনের হালকা মন খারাপের অনুভূতি সক্রিয় থাকে। এই অবস্থাটা বেড়ে গেলে তা ‘পোস্ট নেটাল ডিপ্রেশন’-এর আকার ধারণ করে। অবসাদ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে বাস্তবের সঙ্গে প্রায় সম্পর্কচ্ছেদ পর্যায়ে গেলে তা ‘পোস্ট নেটাল সাইকোসিস’-এ পরিণত হয়। এটা ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০০ জনে হয়তো এক জনের হয়। কিন্তু হতেও পারে যে মুর্শিদাকে এমন কোনও মানসিক পরিস্থিতিই গ্রাস করেছিল।’’

Daughter Mother Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy