Advertisement
E-Paper

গ্রন্থাগারে এসে পড়বেন মহিলারা, পাশে পাবেন পুলিশ-প্রশাসনকেও

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের জন্য পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে হিঙ্গলগঞ্জে চালু হল মহিলা পরিচালিত গ্রন্থাগার।সামশেরনগরে কমলাখালি হাইস্কুলের একটি ঘরে ওই গ্রন্থাগারটি শুরু করা হয়। জেলা ও মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের জনসংযোগ বাড়ানো ও পড়াশোনা শিখে যাতে নিজেরাই কিছু করতে পারেন, সে জন্যই গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১০

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের জন্য পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে হিঙ্গলগঞ্জে চালু হল মহিলা পরিচালিত গ্রন্থাগার।

সামশেরনগরে কমলাখালি হাইস্কুলের একটি ঘরে ওই গ্রন্থাগারটি শুরু করা হয়। জেলা ও মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের জনসংযোগ বাড়ানো ও পড়াশোনা শিখে যাতে নিজেরাই কিছু করতে পারেন, সে জন্যই গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লৌহ মানবী’। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে পাঠাগারের মহিলা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘মহিলাদের মধ্যে পড়াশোনার অভ্যাস বাড়বে। তা ছাড়া, এর মাধ্যমে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের অভাবে অনেক সময়ে মহিলারা শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার নীরবে সহ্য করেন। এখন তা আর হবে না। পুলিশকে তাঁরা অনায়াসে এ কথা জানাতেও পারবেন।’’

দিন কয়েক আগে ওই গ্রন্থাগারে শিশু-মহিলা পাচার এবং বাল্য বিবাহ রোধের উপরে এক শিবিরের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল, কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল মণ্ডল, বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত-সহ প্রমুখ। এলাকার দুঃস্থ পরিবারের মহিলারা যাতে পড়াশোনা করতে পারে সে কারণেই এই গ্রন্থাগার চালু করা হল। এখানে এসে মহিলারা নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করতে পারবেন। এ ভাবে দ্রুত তাঁদের সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে সুন্দরবন-লাগোয়া সন্দেশখালি ও বসিরহাট এলাকাতেও মহিলাদের জন্য গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে। অনেক মহিলাই গ্রন্থাগারের সদস্য হচ্ছেন। এই সব গ্রন্থাগারে বই ছাড়াও সংবাদপত্র, পাঠ্যপুস্তক এবং কম্পিউটার-সহ অডিও ভিস্যুয়াল পাঠ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই মহিলা দ্বারা পরিচালিত গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করে মহিলারা শিক্ষিত হলে তাঁদের সন্তানদের মধ্যেও তা প্রভাবিত হবে। এর একটা ভাল প্রভাব সমাজের অন্যদের মধ্যেও পড়বে। এর ফলে নারী ও শিশু পাচারও কমবে বলে মনে করছে পুলিশ।

এক পুলিশকর্তার দাবি, পাচার হয়ে যাওয়া বেশির ভাগ মহিলা এবং শিশুর বাড়ি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামগুলিতে। নানা কারণে অনেক সময়েই ওই সব পরিবারের কাছে পুলিশ পৌঁছতে পারে না। অসহায় মানুষগুলিও সব সময়ে থানায় আসতে পারেন না। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে সেই সব মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবে পুলিশ-প্রশাসন।

এই গ্রন্থাগারের প্রচার ও প্রসারের দিকে লক্ষ রেখে ইতিমধ্যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং হোয়াটস-অ্যাপ খোলা হয়েছে। পাশাপাশি মেল অ্যাকাউন্টও করা হয়েছে। এ সবের মাধ্যমে গ্রামের মহিলারা তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারবেন। কমলাখালি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফণিভূষণ বর বলেন, ‘‘মহিলা পরিচালিত গ্রন্থাগার তৈরির কথা শুনেই স্কুলের একটি ঘর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ১৮ জন সদস্যও হয়েছেন।’’ ‘লৌহ মানবী’ প্রকল্পে স্বাস্থ্য শিবির, হেলথ্ কার্ডের ব্যবস্থা, পিঠেপুলি তৈরি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুলিশ-প্রশাসন সাহায্য করবে। নিজেরা যদি জৈব সারের মাধ্যমে কিচেন গার্ডেন তৈরি করতে পারেন। এ ভাবে সব্জিতে ভেজাল ও রঙ মেশানোর প্রবণতা কমবে বলে আশা করছে প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দা কমলা সর্দার, শান্তি মণ্ডল, শান্তা সর্দার, পারমিতা বাছাড়রা বলেন, ‘‘বিপদে পড়লেও ভয়ে থানায় যেতে সাহস পেতাম না। এখন সেই ভয়টা কেটে গেল। পাশাপাশি বই পড়তে পারব ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।’’

Women Library
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy