Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভিনরাজ্যে পাড়ি শ্রমিকদের, সমস্যায় ট্রলার মালিকেরা

মাছের জোগান নেই। রোজগারে টান পড়ছে। তাই কাকদ্বীপে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা পা়ড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। বর্ষার আগে এই ঘটনায় চিন্তায় পড়েছেন কাকদ্বীপের একাধিক ট্রলার মালিক। শ্রমিকদের বাইরে যাওয়া আটকাতে শ্রমিকদের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ড তৈরির পরিকল্পনা করছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

মাছ ধরতে যাওয়ার আগে। নিজস্ব চিত্র।

মাছ ধরতে যাওয়ার আগে। নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

মাছের জোগান নেই। রোজগারে টান পড়ছে। তাই কাকদ্বীপে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা পা়ড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। বর্ষার আগে এই ঘটনায় চিন্তায় পড়েছেন কাকদ্বীপের একাধিক ট্রলার মালিক। শ্রমিকদের বাইরে যাওয়া আটকাতে শ্রমিকদের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ড তৈরির পরিকল্পনা করছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে পুরোদমে মাছ ধরার মরসুম শুরু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকায়। তার আগেই কাকদ্বীপের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের ভিনরাজ্যে (মূলত কেরল) মাছ ধরতে চলে যাওয়ার খবর আসতে শুরু করেছে। ট্রলার মালিকদের অভিযোগ, অনেক শ্রমিক অগ্রিম নেওয়ার পরেও কেরল চলে গিয়েছেন। ফলে তাঁদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

কাকদ্বীপের ট্রলার চালক মনোলাল দাসের দাবি, ‘‘মহাজনের থেকে টাকা অগ্রিম নিয়ে শ্রমিকদের দিয়েছিলাম। এখন জানতে পারছি কয়েকজন সেই টাকা নিয়েই কেরল চলে গিয়েছে। এ বার কী ভাবে ট্রলার নামাব বুঝতে পারছি না।’’ তিনি জানান, দুর্গাপুজোর পরেই জুনের মরসুমের জন্য টাকা অগ্রিম দিয়ে সারা বছর কাজের চুক্তি করা হয়। তারপর মাছের জোগান যে ভাবে আসে, সে ভাবে শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে লভ্যাংশ ভাগ করা হয়। কিন্তু এ বার ছবিটা বদলাচ্ছে। শ্রমিক কম থাকায় লাভ হওয়া দূরের কথা, ট্রলার কী ভাবে চালাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না মালিকেরা।

কিন্তু কাকদ্বীপ থেকে ভিন রাজ্য পাড়ি দিচ্ছেন শ্রমিকেরা?

কাকদ্বীপের একাধিক ট্রলার মালিক জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে মাছের সংখ্যা কমেছে। মাছ কম ওঠায় কমেছে লাভের টাকা। অন্য দিকে, কেরলে কাজের ধারা ভিন্ন। সেখানে যে রকম লাভ, সে রকম উপার্জন— এই নিয়ম কার্যকর নেই। শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট বেতনে কাজ করেন। মাছ ধরায় লাভ হোক না হোক শ্রমিকদের মাস গেলে টাকা পাওয়া নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা থাকে না। দৈনিক ৩০০-৫০০ টাকা মজুরি মেলে। ঝুঁকিও তুলনায় কম। কারণ, কেরলের উপকূল থেকে একটু গভীরে গিয়ে রোজ মাছ ধরে ফিরে আসার সুযোগ থাকে। কিন্তু কাকদ্বীপ থেকে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে বেরোলে ফের বন্দরে ফিরতে দিন কয়েক সময় লাগে। ঝড়ের মুখে অনেক সময়ে জীবন সংশয়ও হয়। কাকদ্বীপের পূর্ব গঙ্গাধরপুরের রত্নেশ্বর দাস দিন কয়েক আগেই কেরলে চলে গিয়েছেন মাছ ধরতে। তাঁর স্ত্রী মালতিদেবী জানালেন, ‘‘ওই রাজ্যে গেলে দৈনিক টাকা মেলে। মাছ না উঠলেও চিন্তা নেই। তাই ওখানে কাজ করেই বেশি সুবিধা।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ মহকুমার কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা ফ্রেজারগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন বিভিন্ন ট্রলারে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ এ বার রাজ্য ছেড়েছেন। অগ্রিম নিয়েও শ্রমিকদের রাজ্য ছাড়া আটকাতে শ্রমিকদের বায়োমেট্রিক কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশন। এই সংগঠনের কর্তা তথা কাকদ্বীপের ট্রলার মালিক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘সরকার এখনও সব মৎস্যজীবীদের কার্ড দিতে পারেনি। তাই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বায়োমেট্রিক কার্ড দেওয়া হবে। এ বার থেকে ওই কার্ড জমা রেখে শ্রমিকেরা টাকা অগ্রিম পাবেন।’’ কার্ড তৈরির কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু এরপরেও টাকা নিয়ে কেরলে চলে গেলে আটকাবেন কী ভাবে?

বিজনবাবুর কথায়, ‘‘কেরলের মৎস্যজীবী সংগঠনের কাছেও আমরা এই কার্ড দেখে তবেই কাজে নেওয়ার প্রস্তাব দেবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

trollers fisherman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE