জ্ঞানচন্দ্র উপাধ্যায়ের বাংলোর সামনে ভাঙচুর হওয়া আসবাবপত্র। (ইনসেটে) মিলের প্রোডাকশন ম্যানেজার জ্ঞানচন্দ্র উপাধ্যায়।-নিজস্ব চিত্র
হেস্টিংসের পর ভিক্টোরিয়া। শনিবার সকালে চটকল শ্রমিকদের হাতে প্রহৃত হলেন চটকলের প্রোডাকশন ম্যানেজার। আহত সিআই (চন্দননগর) -সহ ৪ পুলিশকর্মী। ভাঙচুর হয়েছে মিলের নানা বিভাগে, কর্তাদের বাংলো, গাড়িতে। তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হল হুগলির দুটি চটকল।
এই ঘটনায় প্রশাসনের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার একই ঘটনা ঘটলেও কেন সামাল দেওয়া যাচ্ছে না? কম বরাতের জন্য চটশিল্পে মন্দা এবং তার জেরে শ্রমিক অসন্তোষের কথা মেনে নিয়েও তাঁরা বলছেন, চটকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের বোঝাপড়ার অভাব হচ্ছে। হেস্টিংসে গোলমাল হয় শ্রমিকদের কাজের শিফ্ট কমানো নিয়ে। ভিক্টোরিয়াতেও বেশ কিছু দিন ধরেই তিন শিফ্টের বদলে দুই শিফ্টে কাজ হচ্ছিল। তা নিয়ে অসন্তোষ ছিলই। শনিবার সকালের শিফ্টের শ্রমিকেরা দেখেন, ১ নম্বর ভবনের ‘হ্যাসিং’ বিভাগ (তাঁতঘর) বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ওই বিভাগের ৬০০ জনকে অন্য বিভাগে কাজ দেওয়া হবে বলে আর একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ওই শ্রমিকেরা কাজ হারানোর ভয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। যোগ দেন অন্য শ্রমিকেরাও।
সকাল ৬টা থেকে চার ঘণ্টা ভিক্টোরিয়ায় তাণ্ডব চলে। নিরাপত্তারক্ষীদের ঘরের টেলিফোনের তার ছিঁড়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা ভাঙচুর চালান সিইও আর কে সিংহের বাংলোয়। তিনি অবশ্য ঘরে ছিলেন না। তবে মিলের প্রোডাকশন ম্যানেজার জ্ঞানচন্দ্র উপাধ্যায়কে ঘর থেকে বের করে এনে চড়, ঘুষি, লাথি মারা হয়। শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে জ্ঞানচন্দ্রকে তখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি পরিবারের লোকেরা।
এর আগে এই ভদ্রেশ্বরেরই নর্থব্রুক চটকলে শ্রমিকের মারে মৃত্যু হয় সিইও হরিকিষান মাহেশ্বরীর। এ দিন গোলমালের কথা শুনে বিশাল পুলিশ বাহিনী গেলে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন। পুলিশ লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটায়। জ্ঞানচন্দ্রবাবুকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করে। চটকলে থমকে যায় উৎপাদন।
ভিক্টোরিয়ার ঘটনার পরে পুলিশের একাংশ বলছে, শিফ্ট চালু রেখে শ্রমিকদের বদলির কথা জানিয়ে ঠিক করেননি কর্তৃপক্ষ। জেলার পুলিশ সুপার বলেন, “কী ভাবে ঘটনাটি ঘটল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চটকল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আগে পুলিশ-প্রশাসনকে জানান। তাতে সব পক্ষেরই সুবিধা হয়।” একই সুরে চন্দননগরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “আগেই এমন ঘটনার আশঙ্কা করে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। সরকার এবং শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চটকল চালাতে বলেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ খুশিমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই ঘটনা ঘটল।”
মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy